বাহুবলীর চরিত্র বিশ্লেষণ: মহেন্দ্র বাহুবলীর মা

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

সংজ্ঞা

আমরা ছোটবেলা থেকেই আমাদের মায়েদের কাছে যেমন বায়না করি, এটা চাই সেটা চাই, তেমনই মায়েরাও আমাদের থেকে কিছু কিছু আশা করে থাকে। আশা মানে বৈষয়িক কোনো ব্যাপারে না, তার আশা  তার ছেলে যেন তাকে ছেড়ে না যায়। বিশেষ করে ছেলে যদি নিজের না হয় এবং মা তাকে মানুষ করে নিজের মত তাহলে সেই মায়ের ভয় আরও বেশি, তার মনে হয়  এই বুঝি  আমার ছেলেকে কেউ কেড়ে নিল। শিবার মা সংজ্ঞার সাথেও একই জিনিস হয়েছে।
মহেন্দ্র বাহুবলীর জন্মের পর তার জ্যাঠা ভল্লাল দেব তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার ঠাকুমা রাজমাতা শিবগামী দেবী তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পেছনে তাড়া করে ভল্লাল দেবের সেনা। নিজের প্রাণ দিয়েও সে নাতির প্রাণ বাঁচায়। আর তাকে পায় সংজ্ঞাদের গ্রামের লোকেরা। সংজ্ঞার নিজের ছেলে ছিল না। সে ছোট শিশুটিকে নিজের ছেলের মত মানুষ করে। সেই ছেলের নাম সে রাখে শিবা।  ছোট থেকেই সংজ্ঞা নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তাকে। শিবাকে সে নিজের মত করে মানুষ করে
শিবা ছোট থেকেই পাহাড়ে চড়ার কথা বলে। যে পাহাড়ের ঐ পাড়ে শিবার আসল জন্মস্থান। সংজ্ঞাও জানে শিবার আসল বাড়ি পাহাড়ের ওপরে কোনো এক রাজ্যে। কিন্তু ছোটবেলায় সে শিবাকে বলে যে ওপরে ভূত আছে, তবুও শিবার ইচ্ছা যায় না.  একই বায়না নিয়ে সে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, ওপরে যাব। আস্তে আস্তে সে বড় হয়ে যায়, কিন্তু তার মনের ইচ্ছা সেই একই থেকে যায়, তার জীবনের লক্ষ্যও যেন একটাই। তার  মা যখন দেখে তার ভূতের গল্পতে, তার মুখের  কথাতে কিছু হবে না, তখন সে শিবের কাছে পুজো করে। অনেক দূর থেকে জল বয়ে এনে শিবের মাথায় ঢালতে থাকে। তাকে এভাবে কষ্ট করতে দেখে শিবা বলে এরম কেন  করছে, তখন মা তাকে বলে সে কথা শোনেনা তাই মা এমন করছে। আসলে মায়েরা এমনই করে। যদি আমরা কথা না শুনি, তাহলে তারা এরম ভাবেই কষ্ট করে। আর সবচেয়ে বড় কথা, মায়েরা তাদের সন্তানকে তাদের কাছে ধরে রাখতে  যেকোনো কষ্ট করতে রাজি। সংজ্ঞার মধ্যে মায়ের সেই দিকটা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে মায়েরা তাদের সন্তানকে সবসময় নিজের কাছে চায়, কোনো বিশেষ স্বার্থে নয়। মায়েরা শুধু তার সন্তানকে চোখের সামনে দেখেই খুশী থাকে। এটাই তাদের কাছে বিশাল পাওনা।

দেবসেনা

আগেই বললাম মহেন্দ্র বাহুবলীর জন্মের সময়েই সে তার জন্মদাত্রী মা দেবসেনার থেকে আলাদা হয়ে গেছিল। তার মা দেবসেনাই তাকে আলাদা করে দিয়েছিল, তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য। সন্তানের জন্য মায়েদের চিরকালীন এই যে আত্মত্যাগ, সেটাই ফুটে উঠেছে দেবসেনার মাতৃত্বে। অমরেন্দ্র বাহুবলী যখন দেবসেনার মিন জয় করে নেয়, কিন্তু তার মায়ের আদেশ রাখতে তাকে অনুরোধ করে তার সাথে বন্দী হয়ে থাকতে, তখন যে দেবসেনা বন্দিনী হয়ে যেতে চায়নি নিজের আত্মাভিমানে, সন্তানের জন্য সেই দেবসেনা নিজে স্বেচ্ছায় হয়েছে বন্দী। তাতে তার সন্তান যদি বেঁচে যায়। এটাই বোধয় মায়েদের চিরকালীন স্বভাব। সন্তানের জন্য তারা সব ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি। নিজের সবটুকু দিয়ে সে সন্তানকে রক্ষা করে। দেবসেনা করেছেও তাই।
অনেক সময় ছেলে যদি বাইরে থাকে, অনেক পাড়া পড়শিকে বলতে শুনেছি, “ছেলে আর আসবে না।”, কিন্তু একজন মা নিজের সন্তানকে চেনে, লোকের কথায় সে কান দেয় না। হয়ত তাকে অপেক্ষা করতে হয় একটু বেশি, হয়ত পাড়াপড়শির এই যে গা জ্বালানো কথা তাকে শুনতে হয় আরও কিছুদিন, কিন্তু ছেলে যখন অবশেষে কাজ শেষ করে ফিরে আসে মায়ের কাছে, তখন সেই মা বাহুবলী ১ সিনেয়ামাটায় ভল্লাল দেবের মূর্তি উন্মোচনের সময় সবাই বাহুবলীর নাম নেওয়ায় যেমন চাহনি দিয়েছিল সে ভল্লাল দেবকে,  সেরম  চাহনিই মা দেয় পড়শিদের। আমরা দেখেছি মায়েদের এই স্বভাবটা দেবসেনার মধ্যে। সে নিজের  সন্তানের ওপর ভরসা করে অপেক্ষা করেছে ২৫ বছর। বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনেক উপায় তার ছিল, কিন্তু সেই পথ বেছে নেয়নি সে। সে জানে তার সন্তান আসবে, সেই আনবে তার মুক্তি। নিজের সন্তানের ওপর এই যে ভরসা, সেটা আবার পালন করা সন্তানের থেকে আসে না। তাই কিন্তু শিবার পালন করে যে মা সংজ্ঞা, সে শিবার ওপর এই ভরসা করেনি, সে বারবার ভয় পেয়েছে শিবা চলে যাবে। কিন্তু জন্মদাত্রী মায়ের সাথে ছেলের যে আলাদা বন্ধন, সেই পবিত্র বন্ধনের টানে দেবসেনা জানে তার ছেলে একটিবার হলেও তার কাছে আসবে। একেই বলে নাড়ির টান।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।