বাহুবলীর চরিত্র বিশ্লেষণ: অমরেন্দ্র বাহুবলীর মা

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

বাহুবলীর অন্যতম প্রধান চরিত্র শিবগামী। তার চরিত্রে যতটা ফুটে উঠেছে একজন রাজমাতার দিকটা, তার থেকেও বেশি ফুটেছে একজন গর্বিত মাতার দিক। সে দুজন বীর পুত্রের জননী। এজন্য তার গর্বের শেষ ছিল না। একজন মা হিসাবে সে গর্ব তাকে মানায়ও বটে।
ছোট বেলায় অমরেন্দ্র বাহুবলী যখন জন্মের সময় মাতৃহারা হয়, তখনই শিবগামী তাকে নিজের বুকে তুলে নেয়। নিজের ছেলের সমান অধিকার দিয়ে বড় করে। বাহুবলী ১ সিনেমাটায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি শিবগামীর স্নেহের বেশিরভাগটা বাহুবলীই পেয়ে এসেছে। কথাটা খুব ভুল নয়। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজের ছেলে ভল্লালের বানানো চক্রান্তে তাকে ফেঁসে যেতে দেখেছি আমরা। সে কথায় আসছি পরে।
ছোটবেলা থেকে সে সমান মমতায় দুই পুত্রকেই মানুষ করে। এবং প্রথম থেকে দুই পুত্রের মধ্যেও কোন ঝামেলা ছিল না, ছিল না বলা ভুল, ভল্লাল সেটা কখনোই প্রকাশ করেনি। সে নিজের শিক্ষায় মন দিয়েছে বেশি। কিন্তু বাহুবলী শিক্ষার পাশাপাশিও সবসময়েই থেকেছে মায়ের সাথে সাথে। সে মায়ের পুজো দিতে যাওয়ার সময়েই হোক, বা রাজসভায় যাওয়ার সময়েই হোক, অথবা মায়ের অসুস্থতার সময়ে সারা রাত জেগে কাটিয়ে দেওয়াই হোক। স্বাভাবিকভাবে সেই মায়ের প্রিয়পুত্র হয়ে উঠেছে। আবার রাজমাতা হিসাবেও বাহুবলীর কাজে খুশি হয়ে তাকেই শিবগামী মহারাজা ঘোষণা করে দেয়। কিন্তু এর পরেই শুরু হয় মায়ের মনের আসল টানাপোড়েন।
এক পুত্রকে সিংহাসন দিয়ে মায়ের মন কিন্তু সুখী হয় না। তার মনে একটা দ্বন্ধ কাজ করতেই থাকে। সেই দ্বন্ধ থেকেই তার মমতা ভল্লালের দিকে ঝুঁকে যায় এবার। আর সেই মমতায় অন্ধ হয়ে যায় সে। সে ভল্লালকে কথা দিয়ে ফেলে দেবসেনা ভল্লালের বউ হবে। কিন্তু যখন বাহুবলী তাকে বলে সে ভুল, আঘাত পায় একজন গরবিনী মায়ের মন। যে ছেলেকে ছোট থেকে সে মানুষ করেছে এত যত্নে, যে ছেলেও তার সেবা করেছে কত যত্নে, সে তাকে বলল তার ভুল হয়েছে। তার খালি মনে হয় একটা মেয়ে পেয়ে ছেলে তাকে ভুলে গেল! শুরু হল ভুল বোঝাবুঝির পালা।
ছেলেদের বিয়ের পর মায়েদের এই মনের অবস্থাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়, বিশেষ করে ছেলের বউ যদি ছেলে নিজেই আনে। মায়ের মনে হতে থাকে ছেলেকে আমার থেকে বউ দূরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তার ওপর যদি মায়ের অন্য সন্তান সেই জায়গাটা উস্কে দেয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। এক্ষেত্রে ভল্লাল করেছেও তাই। মায়ের মন বিষিয়ে গেছে পুরো। বিষিয়ে যাওয়া এই মন নিয়ে শিবগামী বাহুবলীকে রাজত্ব, রাজপ্রাসাদ দুটো থেকেই বার করে দেয়।
কিন্তু মায়ের মন কি ছেলের কথা না ভেবে থাকতে পারে! রাতে তার ঘুম আসে না, আমরা দেখি সে পায়চারি করে ছাদে। তারপর একটা দিন আসে, যখন মায়ের ভুল ভাঙে, কিন্তু যতদিনে সে তার এই ভুল বুঝতে পারে, ততদিনে দেরী হয়ে গেছে অনেক। মায়ের আর ছেলের মধ্যে এই ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তার ফল কিন্তু হয় বাহুবলীর মতই। বাহুবলীর মত সে মারা যায়না ঠিকই, কিন্তু মায়ের হৃদয়ের টুকরোটা চিরকালের জন্য আলাদা হয়ে যায়।


লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum