লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
- সিনেমার নাম: ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ
- পরিচালনা: অঞ্জন দত্ত
- প্রযোজনা: আর কে টেকভিশান এবং এসকে মুভিজ
- অভিনয়: যীশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট
ব্যোমকেশ বক্সী। বাংলা সাহিত্য এবং সিনেমা জগতে বিখ্যাত একটি গোয়েন্দা চরিত্র। আদ্যোপ্রান্ত বাঙালীয়ানায় মোড়া একটি দুর্দান্ত চরিত্র। যদিও ব্যোমকেশ কিন্তু নিজেকে গোয়েন্দা বলা একদমই পছন্দ করেন না। তিনি সত্যান্বেষী, অর্থাৎ সত্যের খোঁজে তার সমস্ত কাহিনী। তার গল্পগুলো শুধুই রহস্য বা অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী না, তার গল্পগুলো সময়ের কথা বলে। এবারের ব্যোমকেশে ভিয়েতনামের যুদ্ধের সময়ের বাংলার পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। বাংলাতেই আবিষ্কার হওয়া একটা কেমিক্যাল অস্ত্র নিয়ে আবর্তিত হয়েছে গল্প। গল্পটি দুটি গল্প নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। উপসংহার এবং অগ্নিবাণ। দুটো গল্প দুটো টাইমলাইনে এগিয়েছে। উপসংহার এগিয়েছে বর্তমানে আর অগ্নিবাণ এগিয়েছে ফ্ল্যাশব্যাকে। এরই মাঝে ব্যোমকেশের সত্যান্বেষী গল্পটিকেও দেখানো হয়েছে সাদা কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে।
অঞ্জন দত্ত যখন অভিনেতা আবীরকে ছেড়ে অভিনেতা যীশু সেনগুপ্তকে আনলেন, তখন সত্যি কথা বলছি কেমন একটা লেগেছিল, কারণ আবীর ততদিনে নিজেকে ব্যোমকেশ হিসাবে একেবারে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। হঠাৎ করে সমকালীন সময়ে অন্য কেউ ব্যোমকেশ করেছে, এটা ঠিক মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু যীশুকে প্রথম যখন দেখলাম ব্যোমকেশে, তারপর থেকে আর আবীরের ফ্ল্যাশব্যাকে যাইনি। দুজনের মধ্যে তুলনা করার জায়গা এটা অবশ্যই না, শুধু এটাই বলার আবীরকে নিয়ে যে আমার আক্ষেপ, তা আর ছিল না তারপর থেকে। আর এই এত কথা এই কারণেই বলা কারণ এই সিনেমাটা দেখার পর যীশু আর ব্যোমকেশ এই সময়ে আমার কাছে মিলেমিশে গেছে। প্রতিটা সিনেমায় যেন ও নিজেকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সঙ্গে পরিচালকের নিজস্ব কিছু উপাদান এসে মিশেছে ওর চরিত্রে এবং সব মিলিয়ে সিনেমাটা বেশ জমে উঠেছে।
এ তো গেল ব্যোমকেশরূপী যীশুর কথা, অন্যান্য চরিত্রে অজিতের জায়গায় শাশ্বতর কথা নতুন করে কি বলব। ব্যোমকেশের মত অজিতের চরিত্রে ও-ও নিজেকে একেবারে বানিয়ে নিয়েছে। কিছু চরিত্র গল্পের প্রয়োজনে পরিচালক নিজের মত বানিয়ে নিয়েছেন। প্রত্যেকেই তাদের অভিনয় একেবারে ঠিকঠাক করে গেছে। শুধু পরিচালক নিজে যে চরিত্রটি করেছেন, সেটা ছাড়া। কোন চরিত্র সেটা বলে আমি গল্পের কোনও অংশ ভাঙতে চাইনা, কিন্তু বাকি অভিনেতারা যেমন নিজেদের চরিত্র ঠিকভাবে পালন করেছে, অঞ্জন দত্তের চরিত্রটি যেন অঞ্জন দত্ত টাইপ হয়ে গেছে। বিশেষ করে তার লুক এবং কিছু কিছু বিশেষ টোনে বলা তার কথা।
এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি বা আবহসঙ্গীত নিয়ে তেমন কিছুই বলব না। কারণ এগুলোয় খুব খুঁত কিছু চোখে পড়েনি। আর সিনেমার খুব টেকনিক্যাল কথা লিখে পাঠককে আমি অযথা কষ্ট দিতে চাইনা। তবে সব কিছুই যেমন বেশ ভালোই করেছেন পরিচালক, তেমন কিছু কিছু খুঁত যেগুলো একেবারে চোখ এড়ায় না, সেগুলো বলা দরকার। মূল যে গল্পদুটো জুড়ে করা হয়েছে, সেখানে সাসপেন্সের আরও জায়গা ছিল, দেশলাই বাক্সের কাহিনী বলার স্টাইল আরও জমাটি করা যেত। বিশেষ করে হাবুলের মৃত্যু। কিন্তু ব্যোমকেশ তো জেনেই গেছে যে দেশলাইতেই বিষ আর এই জেনে যাওয়াটা যেন দর্শকদের কাছেও জেনে যাওয়া। আরও যেটা দেখলাম, সেটা হল কথায় কথায় ব্যোমকেশ দেশলাই জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে। এমনকি ব্যোমকেশ এবং অঞ্জন দত্তের চরিত্রটি গুলি খেয়েও সিগারেট খেতে বসে যখন, তখন কিন্তু সেই হিন্দি সিনেমার মত হয়ে যায় ব্যাপারটা। দেশলাই বাক্স নিয়ে যখন গল্প,তখন কোনোভাবে দেশলাই দিয়ে সিগারেট খাওয়া দেখাতেই হবে। কিন্তু দেশলাইতে এতটা জোর না দিলেই মনে হয় ভালো হত।
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।