লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
- সিনেমার নাম: আসছে আবার শবর
- পরিচালনা: অরিন্দম শীল
- প্রযোজনা: এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট
- অভিনয়: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট
শবর সিরিজের তৃতীয় ছবি, “আবার আসছে শবর”। শবর চরিত্রে শাশ্বত, পরিচালনায় অরিন্দম শীল, মূল কাহিনী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। আমি শবর কাহিনীগুলো পড়িনি তাই তুলনা করে বলতে পারব না কাহিনীর চেয়ে সিনেমাটি কোনও অংশে কম হয়েছে কিনা। পাঠক আমার এই অজ্ঞানতাকে ক্ষমা করে দেবেন।
শবরের সিনেমাগুলোয় শুধুই অপরাধ আর অপরাধী থাকে না, থাকে অপরাধীর মানসিকতা, সমাজের বাস্তবতা। সেদিক থেকে এই কাহিনীটা আগের চেয়ে আরও অন্ধকারময়, আরও জটিল। এই সময়ে সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যা ভাবায় তা ধর্ষণ করে খুন। তাই সময়ের কথা বলতে গেলে সিনেমাতেও সে ঘটনা উঠে আসাই স্বাভাবিক। পরপর কিছু তরুণীর ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এই সিনেমার কাহিনী। কাহিনীর চেয়ে আমি বেশি করে চিত্রনাট্যের কথাই বলব। সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে চিত্রনাট্য, তার ঘটনা এবং চরিত্রগুলো। মূল ঘটনার পাশাপাশি অন্যান্য শবরের কাহিনীর মত এখানেও দেখানো হয়েছে অন্যান্য চরিত্রের বিভিন্ন দিক। কিন্তু সমাজের যে অন্ধকার সত্য নিয়ে কথা বলতে এই কাহিনী চালু হয়েছে, সেটা কোথাও গিয়ে যেন মূল অভিযুক্ত বিজয়ের ওপর বেশি আলোকপাত করে ফেলেছে, আলোকপাত করেছে রিঙ্কুর ওপর। অথচ কাহিনী শুধু রিঙ্কুর নয়, যে কিনা বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান। সিনেয়ার শেষে শবর তার এইরূপ পরিনতির জন্য দায়ী করেছে তার দায়িত্বজ্ঞানহীন বাবা মাকে। সেটা একেবারেই ঠিক বার্তা। খুব সুন্দরভাবে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে সিনেমায়। কিন্তু যে আসল খুনি, তার স্বীকারোক্তিটা ধরা পড়েই গঙ্গাঘাটে উগড়ে দিয়ে কেমন একটা অদ্ভুত লাগল। যতটা আলোকপাত বিজয় আর রিঙ্কু পেয়েছে, তার থেকে কম হলেও কিছুটা তো পাওয়ারই কথা এই বিকৃত মানসিকতার খুনির। আগের শবরের কাহিনীগুলো কিন্তু পরিবারের ঘটনা, তাই পারিবারিক সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে কথা বলাই বেশি স্বাভাবিক। এবারের কাহিনী কিন্তু এখনকার সমাজের এক ভয়ঙ্কর সত্য তুলে ধরেছে তাই সেই সত্য নিয়ে আরেকটু বেশি কথা বললে ভালো হত। সেই খুনির চরিত্র নিয়ে আরও বেশি কাটাছেঁড়া করলে ভালো হত। প্রথম শবরের সেই পান্তু চরিত্রটার কথা আমার মনে পড়ে, ঋত্বিকের অসাধারণ অভিনয়ে তার মুখে সেই স্বীকারোক্তি যথেষ্টভাবেই তার মানসিকতা ফুটিয়ে তুলেছিল। কিন্তু এখানে যেভাবে পরপর ধর্ষণ করে তারপর মুখে প্লাস্টিক বেঁধে খুন করা হচ্ছিল, তাতে ঐ একইভাবে পান্তু স্টাইলে ধরা পড়েই সে সত্য উগড়ে দিল এটা কেমন লাগল। যতই হোক সে আর সাধারণ মানুষের মত নয়, সে সমাজের একটা রোগ।
সিনেমাটিতে বিকৃত মানসিকতা, বিকৃত যৌনতা, বাবা মায়ের সন্তান পালনে ব্যর্থতা এবং তার পরিণাম, সম্পর্কের জটিলতার পাশাপাশিও আছে ডেটিং সাইটের মাধ্যমে আলাপ হয়ে খুন, আধুনিক সমাজেও কুসংস্কারের প্রভাব এইসব এত দিক। আর এত দিক থাকলে কোনও দিক তো মার খাবেই। ডেটিং সাইটগুলোর কুপ্রভাব নিয়ে বেশি কিছু বলা হয়নি, অথচ বোধয় বললে ভালো হত। কুসংস্কারের প্রভাব ব্ল্যাক মাজিক না দেখালেও চলত। তবে এইসব দিক যদি বাদ দিয়ে দি তাহলে কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে এগয়েছে চিত্রনাট্য।
অভিনয়ে শাশ্বত আর শবর তো একেবারে মিলেমিশে গেছে। শাশ্বতদের মত অভিনেতারা প্রমাণ করে দেন যে হিরো হিরোইন থাকলেই সিনেমা চলে না, অভিনয় করতে গেলে ভালো অভিনেতা হতে হয়। কিছু কিছু নতুন মুখও আছে সিনেমায় এবং তারা তাদের অভিনয় বেশ ভালভাবে করেছে। মিউজিক আর এডিটিং সিনেমার সাসপেন্সটাকে বেশ সুন্দর ভাবে বজায় রেখেছে। কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফি অনেক জায়গাতে কাঁপা কাঁপা। মাথাটা কেমন ঘুরে যাচ্ছিল। সেটা কি সিনেমাটোগ্রাফিতে সমস্যা ছিল না আমারই মাথা ঘুরছিল আপনারা সিনেমাটা দেখে এলে অবশ্যই জানাবেন।
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।
দেখার ইচ্ছে রইল, ফেলুদা, ব্যোমকেশ দের মাঝেও শবর আলাদা জায়গা করে নিয়েছে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।