হ্যাপি হোলি

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

আরও একবার দোতলায় বড়কাকিমার ফ্ল্যাট থেকে ঘুরে এল রিনি। বড়কাকিমা এখন নেই, তবে দিদি আছে। দিদিকে দেখে কেমন ভয় করে রিনির। খালি মনে হয় বকে দেবে। দিদি তাকে বসতে বললে “না পরে আসব” বলে তাড়াতাড়ি চলে গেল রিনি। বড়কাকিমা এখন স্নান করতে গেছে। তিনতলায় নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে এল রিনি।
কয়েক মিনিট অপেক্ষা আবার। তারপর বুক ঢিপঢিপ চালু।
“যাব এবার?”, দেবলীনাকে জিজ্ঞেস করল রিনি।
“এই তো গেলি, দশ মিনিট বোস না!”, দেবলীনার উত্তর।
“না! এতক্ষণে যদি এসে যায়! চ’না!আজকের দিন পেরোলে আবার তো সেই এক বছর।”
গুটি গুটি পায়ে রিনি আর দেবলীনা কয়েক মিনিট পরেই এল বড়কাকিমার ফ্ল্যাটে। বড়কাকিমা তখনও স্নান করে বেরোয়নি। দিদি জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে রিনি? খুব দরকার মায়ের সাথে? আমায় বল না!”
দিদির কথা শুনে গলা শুকিয়ে গেলো রিনির। জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিয়ে বলল, “হ্যাপি হোলি”।
“হ্যাপি হোলি! এটা বলতে তুই ছোটাছুটি করছিস? আয় বোস।”
“না আসলে একটু রং এনেছিলাম বড়কাকিমাকে মাখাবো বলে!”
“মা চান করে বেরিয়ে হোলি খেলবে নাকি?”
“তাহলে আমি আসছি বুঝলে?” রিনির পা কিন্তু তখনও যাবার জন্য প্রস্তুত হয়নি।
“ঠিক আছে। সন্ধেবেলায় আসিস কিন্তু” দিদি বলল।
“ঠিক আছে।” বলে এবার আস্তে আস্তে দরজার দিকে পা বাড়াল রিনিরা। বিষণ্ণমনে ফিরে এল রিনি নিজের ফ্ল্যাটে।
রিনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাড়ার বন্ধুদের সাথে রং খেলা শেষ করে বাড়ি ফিরল প্রীতম। দোতলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দিদির প্রশ্নে বুকটা ধড়াস করে উথল তার। দিদি জিজ্ঞেস করল, “রিনির সাথে দেখা হয়েছিল?”
“রিনি? কেন?” পাল্টা প্রশ্ন প্রীতমের।
“তিনবার এসেছিল তোকে রং মাখাতে।” কথাটা বলার পর দিদি অন্যঘরে গেল কিছু একটা কাজে। মাও এতক্ষণে স্নান করে বেরিয়েছে। প্রীতমকে স্নানে যেতে বললে সে “ছাদ থেকে এখখুনি আসছি” বলে ছুটে গেল। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে আসবার সময় রিনিদের ফ্ল্যাটের কাছে ধীর পদক্ষেপে চলতে লাগল। ছাদে এসে কাউকে পেল না, পাবার আশা সে করেওনি। কিন্তু নীচে নামবার সময় যখন রিনিদের ফ্ল্যাটের কাছে এসে, “হ্যাঁ মা আসছিইইই” বলে জোরে হাঁক দিল, তখন আশা করেছিল কেউ হয়তো বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কেউ এল না। বিষণ্ণমনে প্রীতম ফিরে এল নিজের ফ্ল্যাটে।
ছ’তলার এই বিল্ডিং-এ দোতলার বাসিন্দা প্রীতমরা। কিছুদিন হল রিনিরা তিনতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়েছে। তিনতলাতেই রিনির সমবয়সী দেবলীনা তার বাবা মায়ের সাথে থাকে। ফ্ল্যাটে আসার কিছুদিনের মধ্যে আলাপ রিনিদের সাথে প্রীতমদের। প্রীতমের মাকে বড়কাকিমা বলে ডাকে রিনি। আর ক্লাস টুয়েলভের প্রীতমকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় পঞ্চদশী রিনির। হোলির দিনে ভেবেছিল প্রীতমদার সাথে অনেকটা রং খেলবে। কিন্তু কৈশোরের লজ্জা কাটিয়ে যেটুকু সে পেরেছিল, প্রীতমের দিদির ভয়ে সেটুকু সাহসও কোথায় উধাও হয়ে গেল। আরও একবছর অপেক্ষা করতে হবে তাকে এখন।
তবে একবছর অপেক্ষা করতে হল না তাকে আর। রিনির বাবার বদলির চাকরি। ছ’মাসের মাথাতেই অন্য জায়গায় চলে যেতে হল রিনিদের। তারপর সময় বয়ে গেল অনেক। কৈশোর পেরিয়ে যৌবন এল রিনির জীবনে। কিন্তু কৈশোরের সেই ভালো লাগাকে আজও ভুলতে পারেনি রিনি।
একদিন ফেসবুকে একটা নাম দেখে বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডটা ছটপটানি শুরু করে দিল। ফেসবুক তাকে বলছে এই বিশেষ ব্যক্তিটিকে সে চিনতে পারে। প্রোফাইলটায় ক্লিক করল রিনি। উত্তেজনায় তার আঙুল কাঁপছে। এভাবে ফেসবুক তার অতীত জীবনের ভালো লাগা কে ফিরিয়ে আনতে পারে, তা রিনি ভাবতে পারেনি। প্রীতম অধিকারীকে সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে কিনা ভাবতে ভাবতেই, প্রীতমের প্রোফাইল থেকে আপলোড করা একটা ছবি চোখে পড়ল রিনির।
“হ্যাপি হোলি” লেখা ছবিটাতে প্রীতমদা একটি মেয়ের গালে আবীর মাখাচ্ছে। ছবির নীচে প্রচুর কমেন্ট। তার মধ্যে বেশির ভাগ কমেন্টতেই লেখা, “নাইস কাপল”।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

2 Comments

  1. Pingback: ৮ মার্চ ।। আজকের বাছাই | সববাংলায়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।