লেখক: মিত্রা হাজরা
লালন সাঁই দেহভান্ড কাব্যে পঞ্চভূতের অবস্থান বোঝাচ্ছেন ।
আকাশ বা ব্যোম –শব্দগুণ কানে স্থিতি–কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, লজ্জা।
বাতাস স্পর্শ গুণ–চামড়ায় স্থিতি–ধারণ, চালন, সঙ্কোচন, প্রসারণ।
আগুন–রূপগুণ–চোখে স্থিতি –ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, ভ্রান্তি, আলস্য।
পানি বা অপ — রসগুণ-জিহ্বায় স্থিতি-বীর্য, (শুক্র, শোণিত) মল, মূত্র, মজ্জা ।
পৃথিবী বা মাটি–গন্ধগুণ-নাকে স্থিতি–অস্থি, মাংস, নখ, রোম, চর্ম।
সাঁইজী বললেন— সাধন জগতে এই পাঁচগুণ বা তত্ত্ব বশীভূত হয় পাঁচ পদ্ধতির মাধ্যমে ।
পৃথিবী বশীভূত হয় গুরুর কৃপায়।
অপ বা জল বশীভূত হয় গুরুর নাম সংকীর্তন এ
তেজ বা আগুন বশীভূত হয় সদ ভাবনায়।
বাতাস বা বায়ু বশীভূত হয় ধ্যান যোগে।
আকাশ বা ব্যোম বশীভূত হয় সাধন নাসিকায় অর্থাৎ প্রাণায়ামে।
এই স্থুল দেহের মধ্যেই সৃষ্টি ও স্রষ্টার সূক্ষদেহ নিহিত আছে।
সম্যক গুরুর কাছে শিক্ষা দীক্ষার আদর্শিক অনুশীলন দ্বারা এই রহস্যের ভেদ সম্বন্ধে জানা যায়। চুরাশি লক্ষ যোনিদ্বার পার হয়ে এই মানবদেহ লাভ করি আমরা। গুরু যদি দয়া করেন তবেই এ রহস্য ভেদ হয়।
‘মানুষ তত্ত্ব সত্য হয় যার মনে/সে কি অন্য তত্ত্ব মানে-‘–গুন গুন করে গেয়ে উঠলেন সাঁইজী ।
দুপুর বেলায় বনতল আশ্চর্য শান্ত, সমাহিত, সুন্দর। বিশাল একটি গাছের ছায়ায় বিষন্ন সাঁইজী বসে আছেন। চোখের কোণ চিক চিক করছে, সব ছেড়ে, নিজের ভিটে ছেড়ে এসেও মায়া যেন কাটছে না। খবর পেয়েছেন ভাঁড়ারা গ্রামে মা আর নেই। তার স্ত্রীও যে কোনো সময় পৃথিবীর মায়া কাটাবে। পাশে এসে দাঁড়ায় মতিবিবি —এ কি সাঁইজী,খবর এসেছে আপনি একবার গাঁয়ে যাবেন না! না বিশাখা–যা ছেড়ে এসেছি, একেবারেই ছেড়েছি, আর ও দিকে ফিরব না । তবে ভোলাই ভাইকে পাঠাই কিছু জড়ি বুটি দিয়ে –চিকিৎসার দরকার ওনার। দেখো চেষ্টা করে, তবে সে চিকিৎসা বৌ নেবে কি না আমার সন্দেহ আছে! বড় অভিমানী মেয়ে। না নেয়নি, কোনো চিকিৎসা ছাড়াই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো অভাগী মেয়ে। যার উপরে প্রবল অভিমান ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। স্বামী থাকতেও যে বিধবার বেশে বাকি দিনগুলো কৃচ্ছসাধন এ কাটিয়েছে। ঝুপড়ির পর ঝুপড়ি, দিন গুজরান হয় ভিক্ষা করে। তাও শিষ্যরা ভাঁড়ারা গ্রামে শ্রাদ্ধ শান্তির ব্যবস্থা করে দেয় ভিক্ষা করে। লালন সাঁই অন্য গ্রামে কবিরাজী চিকিৎসা করতে যান ঘোড়ায় চেপে, ভাঁড়ারা গ্রামে আর যান না কখনো।
চলবে…
গ্রন্থ ঋণ —
লালন ভাষা অনুসন্ধান –আবদেল মান্নান
লালন সমগ্র–মোবারক হোসেন খান
লালন শাহ ফকির–মুহম্মদ আবদুল হাই।
লেখকের কথা: মিত্রা হাজরা
আমি মিত্রা, লেখালেখি করতে ভালোবাসি, কবিতা, ছোটগল্প লিখি মাঝে মাঝে। বই পড়তে ও গান শুনতে ভালোবাসি। পড়ি শংকর এর লেখা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প আমার খুব প্রিয়। জীবনানন্দ দাশ, রুদ্রমুহম্মদ শহিদুল্লা, সুনীল, বিষ্ণু দে এর কবিতা পড়তে ভালোবাসি। আমার লেখা পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে বা খারাপ লাগলে অবশ্যই জানাবেন।