সম্পর্ক : ন্যাশনাল হাইওয়ের সাথে মানুষের

লেখক : অয়ন মৈত্র

পাড়ার কানাগলি।কানাগলি যেমন হয় আর কি।পিচ উঠে এধার ওধার গর্ত। সাথে কুকুরের ময়লা,এঁটো ভর্তি পলিথিন প্যাকেট, আর খারাপ হয়ে যাওয়া একটা টিউবওয়েল নর্দমার ভুরু ঘেঁষে। এখন ঘটনা হল এই গলি দেখেই প্রতিদিন ঘুমোতে যেতিস তুই। এই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতেই অনেকবার কেঁদে ফেলেছিলি…কয়েকবার তো আমার চোখের সামনেই।
এই গলিটাই, গলায় ঝোলানো ওয়াটার বোতল থেকে আজকের ডেবিট কার্ড সুদ্ধু পার্স-এ, তোর রুপান্তরটা দেখেছে ধৈর্য ধরে দিনের পর দিন; ভোর হবার আগে শেষ ল্যাম্পপোস্টের আলো নেভা অবধি।
এরপর, একদিন তুই ন্যাশনাল হাইওয়ে দেখলি।
ওই কানাগলিতে জল জমলে, বাঁ হাতে ছাতা আর ডানহাতে সালোয়ারের পাজামাটা যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে,মনে মনে সরকারের নাম কি কি বলেছিলি; কিংবা ধর সাইকেল নিয়ে ঢুকতে গিয়ে কতদিন আটকা পড়ে গিয়েছিলিস বেয়ারাভাবে ঢোকানো রিক্সার পেছনে,আজ আর মনে করতে পারিস না এসব।
বাসটা এতক্ষণে টোলট্যাক্স পেরিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটছে NH-6 ধরে।
রোজই এই সময়টা কেমন একটা অপার্থিব লাগে তোর শহরটাকে। একটা কেমন যেন নির্বাক করা অনুভূতি গ্রাস করে তোকে।
আসলে তোকে অবাক করল কোনটা? ন্যাশনাল হাইওয়ের কোন অভিসন্ধিতে জড়িয়ে পড়ে পৃথক হয়ে গেল তোর কানাগলির জীবন আজকের জীবনের থেকে?
ন্যাশনাল হাইওয়ের গতি,তার প্রশস্ত পরিধি,তার ব্রেক ফ্রি জ্যাম ফ্রি…দিগন্ত দেখার ইগো তোকে পার করে দিয়েছে পিছন ফিরে তাকানোর অভ্যেস থেকে।অনেকটা যেভাবে বয়ঃসন্ধি শেষ হয়ে যায় আগে থাকতে না জানিয়ে।সেইরকমভাবে।
বাসটা এতক্ষণে সিক্স লেনে উঠে পড়েছে।গতি আরো বাড়ছে।
সমস্যার জন্মলগ্নে সাধারণত সূর্য ঢাকা পড়ে যায় মেঘে।মেঘ ঢাকা পড়ে যায় ধুলোয়। ধৈর্য ধরতে এখন আর তোর ভালো লাগেনা। তোর কানাগলির জীবনে যে বাড়িগুলোর গেটের রং পর্যন্ত মুখস্থ থাকতো, এখন হাইওয়েতে ওঠার পর সব স্টপেজের নাম মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করিসনা আর।
অনেকগুলো পাড়া, গলি মরে তবে একটা হাইওয়ে তৈরি হয়। মানুষের জীবনে তাই ন্যাশনাল হাইওয়ের গুরুত্ব অনেক।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।