রোগ নিরাময়ে দুধ হলুদের ব্যবহার

লেখক: মিজানুর রহমান সেখ

রোগ নিরাময়ে দুধ হলুদের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। হলুদ যখন দুধের সঙ্গে মেশানো হয়, এর গুণাগুণ আরও বেড়ে যায় । হলুদমিশ্রিত দুধকে ‘স্বর্ণালী দুধ (Golden Milk)’ও বলা হয়। ঠাণ্ডা লাগা, শারীরিক ব্যথাবেদনাসহ বিভিন্ন রোগে এক গ্লাস হলুদ-দুধ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। হলুদমিশ্রিত দুধকে ‘স্বর্ণালী দুধ (Golden Milk)’ও বলা হয়। ঠাণ্ডা লাগা, শারীরিক ব্যথাবেদনাসহ বিভিন্ন রোগে এক গ্লাস হলুদ-দুধ হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। রোগ নিরাময়ে দুধ হলুদের বিভিন্ন ব্যবহার এখানে তুলে ধরা হল।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে: হলুদ মিশ্রিত দুধ স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা কারকামিন BNDF( brain-derived neurotrophic factor)বাড়াতে সাহায্য করে। (BDNF is a compound that helps your brain form new connections and promotes the growth of brain cells.)

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রদাহ কমাতে দুধ-হলুদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

মন মেজাজ ভালো রাখতে: আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে কারকামিন মন মেজাজ ভালো রাখে ও ডিপ্রেশন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

সর্দি ও ঠাণ্ডা লাগা কমাতে: হলুদে  অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বেশ কিছু উপাদান আছে। এগুলো শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়। গরম গরম হলুদ-দুধ সর্দি কমায় ও গলা ব্যথায় আরাম দেয়।।

ব্যথা বেদনা দূর করতে: ব্যাথা বেদনা কমাতে নিয়মিত দুধ-হলুদ সেবনে ভালো উপকার পাওয়া যায়। পেশির নমনীয়তা বাড়িয়ে দেওয়ায় বিশেষ করে বাতের ব্যাথায় আরাম পাওয়া যায়।

রক্ত পরিশোধনে: হলুদমিশ্রিত দুধের আয়ুর্বেদিক উপাদান প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে। রক্তের দূষিত পদার্থ গুলো শরীর থেকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। রক্ত সঞ্চালনেও সাহায্য করে হলুদ-দুধ।  

লিভার ও কঙ্কালতন্ত্র ভালো রাখতে: নিয়মিত হলুদ-দুধ পান করলে সুস্থ থাকে লিভার।দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শোষণে অস্থি ও কঙ্কাল তন্ত্র শক্তিশালী হয়।

হজম শক্তি বাড়ায়: হলুদমিশ্রিত দুধ পরিপাকের প্রয়োজনীয় পাকরস ও উৎসেচক গুলো যথাযথ ক্ষরণের সাহায্য করে।  হজমের গণ্ডগোল দূর করে দ্রুত পরিপাকে সহায়তা করে।  

ওবেসিটি কমাতে: গরম গরম হলুদ-দুধ ওজন কমাতে পারে। এটি দেহের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান শরীরকে রাখে সুস্থ ও কর্মক্ষম।  

ঘুমের সমস্যা দূর করে: ইনসমনিয়া(Insomnia) অথবা ঘুমের সমস্যা দূর করে হলুদমিশ্রিত দুধ।

স্বর ভাঙলে : কোনো সাধারণ কারণে গলা বসে স্বর রুদ্ধ হয়ে গেলে হলুদ গুঁড়োর শরবত চিনি মিশিয়ে একটু গরম করে কিছুক্ষন অন্তর বার খেলে চমৎকার উপকার পাওয়া যায়।

গলা ধরে গেলে : চিৎকার, বক্তব্য বা গান যে কোনো কারণে গলা বসে গেলে কিংবা স্রেফ গলার আওয়াজ ও সুর ভালো রাখতে হলুদ মিশ্রিত হালকা গরম দুধের বিকল্প নেই।

সাবধানতা : হলুদের অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও হলুদ ব্যবহারে বেশ কিছু ঝুঁকি আছে । বিশেষ করে যাদের লিভারের সমস্যা বা রোগ আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হলুদ খাবেন। বেশি হলুদ গ্রহণ তাদের জন্য ক্ষতিকর। ল্যাক্টোস ইনটলারেন্ট হলে দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে দুধ বাদ দিয়ে মধু, সয়া দুধ অথবা শুধু হলুদ অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে। দুরারোগ্য কোনো লিভারের অসুখ হলে হলুদ যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বকে সহ্য না হলে হলুদের ব্যবহার বাদ দিন। একাধারে দীর্ঘদিন কাঁচা হলুদ না খেয়ে মাঝে মধ্যে বিরতি দিতে হবে। পরিমাণমতো হলুদ খেতে হবে। অতিরিক্ত হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

তথ্য সূত্রঃ
1)http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/
2)https://www.banglatribune.com/lifestyle/news/
3)https://www.healthline.com/nutrition/golden-milk-turmeric

লেখকের কথা: মিজানুর রহমান সেখ
মিজানুর পেশায় শিক্ষক এবং একজন সমাজসেবক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই মূলত লেখালিখি। লেখক পদার্থবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।