ভ্রাম্যক

লেখক : শুভ্রনীল দত্ত

লোডশেডিং এর মধ্যে গল্পের শেষ অধ্যায়টি লিখছিল অপু। বাইরে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে প্রবল বেগে। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। দরজা খুলতেই সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল একটি ষণ্ডামার্কা লোক। অপু কিছু বলার আগেই লোকটি বলল,
–একদম ভিজে গেছি গামছা পাওয়া যাবে?
–আপনি …
–ওহ আসলে বৃষ্টি বাদলের মধ্যে আপনার বাড়িটাই সামনে পড়ল তাই একটু মাথা গোজার জন্য ঢুকে পড়লাম।
অপু গামছা দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করল,
–আপনার বাড়ি কি এই পাড়ায়?
–না না আমি এসেছি লেখক অপরাজিত ঘোষের বাড়ি। কিন্তু এই দুর্যোগের মধ্যে বুঝতে পারছিনা তার বাড়ি কোনটা ।
–একদম ঠিক বাড়িতেই এসেছেন। আমিই অপরাজিত।
–তাই নাকি? বেশ তাহলে তো ভালই হল । শুনুন না, আমি এসেছি আপনার একটি দরকারে ।
–মানে?
–আসলে আপনি যে গল্পটা লিখেছেন ‘আগন্তুক’ নামে সেটায় বেশ কিছু ভুল রয়েছে।
–দাঁড়ান দাঁড়ান, আগন্তুক তো এখনো প্রকাশিতই হয়নি, এখনো শেষের কিছুটা লেখা বাকি আছে । আর এর মধ্যেই আপনি…
–আরে মশাই, প্রকাশিত হয়নি বলেই তো আপনার কাছে আসা ।
–এ আবার কেমন কথা?
–আপনার লেখার ভুল টা শুধরে দিতে এসেছি, তাছাড়া আপনি তো নিজেই স্বীকার করলেন যে গল্পটি এখনো প্রকাশিতই হয়নি, তাহলে তো আরও সুবিধাই হল ।
অপু কৌতুক স্বরে হাসতে হাসতে বলল,
–দেখুন, আপনি কিন্তু আবার উজবুকদের মতো বলে বসবেন না যে আপনি ভবিষৎ থেকে এসেছেন আমার ভুল সংশোধনে।
–একদম ঠিক ধরেছেন। যদিও আপনার গল্প পড়েই বুঝেছিলাম যে আপনি সময় যাত্রার বিশ্বাসী নন, সেইজন্য আরও কৌতূহল জেগেছিল আপনার সাথে দেখা করার।
অপু বলল, কি উন্মাদ রে বাবা!
–কিছু বললেন?
–না কিছুনা, কি যেন ‘ভুল’ শুধরে দেবেন বলছিলেন?
লোকটি সঙ্গে করে নিয়ে আসা বইটি খুলে বলতে লাগল,
–হ্যাঁ সেটাই তো বলছি, আপনি গল্পে লিখেছেন যে “কোনোভাবেই সময়ের গতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়, তাই যা একবার ঘটে যায় বাঁ যা কিছু ঘটতে চলেছে সেটায় কোনোভাবে বদলানো যায় না।” এই কথাগুলো কিন্তু সঠিক নয়।
–কেন? এতে আবার ভুল কি আছে?
–দেখুন যদি আলোর গতি সমন্বিত কোনো মাধ্যমকে কাজে লাগানো যায় তবে আমরা অনায়াসেই পরিভ্রমন করতে পারব ভবিষ্যতে, আবার একইরকম ভাবে যদি উচ্চ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সমন্বিত কোনো বৃহৎ বস্তুর কাছাকছি থাকতে পারি তাহলে আমাদের সময় এর গতি হ্রাস পাবে এবং আমরা অবস্থান করবো অতীতে, এই দুটি থিওরির বৈজ্ঞানিক প্রমান ও রয়েছে…
লোকটির কথা শেষ করতে না দিয়েই অপু বিরক্তির সাথে বলে উঠল
–হ্যাঁ, তা রয়েছে কিন্তু এদের কোনটিরই প্রয়োগ তো পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থায় সম্ভব নয়।
–লোকটি বুঝতে পারছে অপু রেগে যাচ্ছে। কিন্তু সে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে বলল
–কে বলেছে সম্ভব নয়? আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ওয়র্ম হোল, আপনাকে শুধু তাদের সঠিক কো-অরডিনেট আর ফ্রিকুয়েন্সি জানতে হবে।
–শুধুমাত্র কো-অরডিনেট আর ফ্রিকুয়েন্সি দিয়েই সময় যাত্রা যে সম্ভব তার কি কোনো প্রমান পাওয়া গেছে এখনো অবধি?
লোকটি মুচকি হেসে বলল,
–তার জলজ্যন্ত প্রমান তো অনেকক্ষণ আগেই দিয়েছি আপনাকে।
–অপু এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে লোকটি কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অপু বড় বড় চোখ করে উচ্ছসিত হয়ে বলল
–আপনিই। তার মানে আপনি নিজেই তার উদাহরন।
–শুধু আমি একা নয় আমার হাতের বইটাও এসেছে ভবিষ্যৎ থেকে,
–বইটি টেবিলে রেখে লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল,
–তাহলে বুঝতে পারলেন আপনার ভুলটা কোথায়?
–অপু কি বলবে দিশা পাচ্ছেনা। এই লোকটি মিথ্যেও বলতে পারে কিন্তু লোকটিকে পুরোপুরি মিথ্যেও বলা যায় না তার অন্যতম কারন তার হাতের বইটি। সে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল
–আচ্ছা আপনার নামটা কি যেন বলেছিলেন?
লোকটি উত্তর দিতে যাবে এমন সময় বাইরে চ্যাঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় অপুর। ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখে সে শুয়ে আছে বিছানায়, দিনের বেলা, কোথাও কোনো ঝড় বৃষ্টির চিহ্নমাত্র নেই। অপু বুঝতে পারে লেখাটা নিয়ে বেশিই ভাবছে সেই জন্য এরকম একটা স্বপ্ন দেখেছে, তাড়াতাড়ি লেখাটা শেষ করে প্রকাশনীতে পাঠাতে হবে। নাহলে এরকমই চিন্তাভাবনা বারবার তাকে অস্বস্তিতে ফেলবে।
বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে যেতে গিয়ে তার চোখ পড়ল টেবিলের ঠিক একি জায়গায় রাখা রয়েছে একটি বই। বইটির প্রচ্ছদে লেখা রয়েছে ‘আগন্তুক’ লেখক এর নাম অপরাজিত ঘোষ। এই বইটা তো সেই লোকটা সঙ্গে করে এনেছিল। অপু বুঝে উঠতে পারে না এই বইটা এখানে এলো কি করে। বইটা হাতে নিয়ে অপু পাতা উল্টে দেখল সেখানে বইটি প্রকাশিত হওয়ার তারিখ দেওয়া রয়েছে ২৮শে জুন ২০০৯, কিন্তু আজকের তারিখ তো সবে মাত্র ৮ই জানুয়ারি, তবে কি সত্যিই লোকটি সময় ভ্রাম্যক?


লেখক পরিচিতি : শুভ্রনীল দত্ত
আমি নদীয়া বাসী। বিভিন্ন শাখায় পড়াশোনা করেছি এখনও করছি। উদ্ভিদবিদ্যা, প্রানীবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিভাগে বিশেষ আগ্রহ পাই। সবথেকে বেশি অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এ। লেখালেখির পাশাপাশি গান, ছবি আঁকা, ছবি তোলা এবং সিনেমাটোগ্রাফির শখ আছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন