গব্বর ও জুলি

লেখক : রিঙ্কু চট্টোপাধ্যায়

ছুটির দিনের সকালটা যে একটু গড়িয়ে নেব, তার উপায় নেই!  দুধওলা, পেপারওলা, মাছওলা যেই হোক না কেন গলিতে ঢুকলেই গব্বর তার গর্জন শুরু করবে একনাগাড়ে!  ঘুমের বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট! সেটা কিন্তু শুধু গেটের ভেতর থেকেই! যদি খোলা পেয়ে গেটের বাইরে বেরোয়, আর সেই সময়  দ্বিচক্রযানে চড়ে কোন অচেনা অতিথি এ পাড়ায় আসে, সঙ্গে সঙ্গে লেজ গুটিয়ে আগে গেটের  ভেতরে ঢুকবে,তারপর শুরু করবে তারস্বরে ভৌ ভৌ ভৌ ভৌ!

নামেই গব্বর, স্বভাবে জব্বর ভীতু। পাড়ার রুগ্ন বিড়ালটাও ওর সামনে নিজেকে চিতাবাঘ ভাবে। কেন যে ওর নাম গব্বর রেখেছিলাম কে জানে! গলির এক কোণে মা-হারা ছানাটাকে বাড়িতে এনেছিলাম, ভাবলাম এঁটোকাঁটা খাবে, থাকবে ঘরে আর চোর এলে তাড়াবে! পাহারাদারের খরচা বাঁচবে! কিন্তু হায় হরি! এ তো নিজেই ভীতুর ডিম!

চেনা মানুষ এলে চিৎকারে কান ফাটায় আর অচেনা লোকে যখন ভোরবেলা এসে গাছের ফুল, ডাঁসা পেয়ারা তুলে নিয়ে যায় তখন পড়ে পড়ে ঘুমায়! আবার স্বজাতির কোন মহিলা এলে স্বভাব তখন ছোঁকছোঁক! সে এক অনাশ্রুত কণ্ঠে আবদার করে গেটের বাইরে যাবার জন্য। মিস লিজা’র মেয়ে ল্যাব্রাডারটাকে নিয়ে ওদের বাড়ির চাকর কায়ুম যখনই বেরোয়, আমায় গব্বরকে গেটের ভেতরে বন্ধ রাখতেই হয়। কারণ ও বাড়ির মালকিন মিস লিজা নিজে এসে আমায় অনুরোধ করে গেছেন দিনে একবার ওনার সাধের বিলিতি কুকুর জুলি বাইরে পটি করতে বেরোয়, সেইসময় যেন আমি আমার নেড়ি থুড়ি গব্বরকে আটকে রাখি। কেননা ওঁর শ্যাম্পু করা চকচকে জুলির সঙ্গে আমাদের গব্বরের মেলামেশা একেবারেই কাম্য নয়! অগত্যা মাথা পেতে সেই নির্দেশ মেনে গব্বরকে ওইসময় বন্দিত্ব যাপন করতে হয়। অসহায় গলায় বার বার তার আর্তনাদ তখন ব্যর্থ হয়! আর জুলিও কায়ুমের হাতের বাঁধন আলগা করে বার বার গব্বরের ডাকে সাড়া দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করে যায়! এ যেন সেই “ওপারে তুমি গব্বর এপারে জুলি,মাঝে বাধা দেওয়ালের”। গায় দুজনে।

এদিকে সেদিন হয়েছে এক কাণ্ড, একে তো ভাদ্রমাস, সারমেয়দের প্রেমের মরশুম, ওদিকে কাজের মাসী আশা কাজ করতে আসার সময় গেট খুলে রেখেছিল। ব্যাস! গব্বরকে আর পায় কে? ও এই মোক্ষম সুযোগের  সদ্ব্যবহার করতে দেরি করেনি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণেই জুলিকে বাইরে পটি করানোর জন্য বের করেছে কায়ুম, গব্বর তার গব্বরি চালে বেরিয়ে এসেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জুলির ওপর। আদরে আবদারে, জুলির প্রশ্রয়ে দুজনের সেই মিলন আটকাতে পারেনি কায়ুম।

এতদিন গোপন থাকলেও গতকালই ব্যাপারটা মিসেস লিজা খেয়াল করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে জুলির অরুচি, বমি এসব লক্ষ্য করে জুলিকে স্থানীয় ভেটারনারি ডক্টরকে দেখিয়ে জানতে পেরেছেন জুলি সন্তানসম্ভবা!  কিন্তু কে এর জন্য দায়ী! কায়ুম ফাঁস করে দিয়েছে সত্যিটা। ব্যাস! কাল বিকেলেই উনি  অভিযোগ জানাতে হাজির আমাদের বাড়িতে!

অবশ্য ওঁকে দেখে এই প্রথমবার গব্বর চিৎকার না করে লেজ নাড়াচ্ছিল!  শাশুড়ি বলে কথা! শাশুড়ি কিন্তু শাসিয়ে গেছেন। হয়তো থানায় ডাইরিও করতে পারেন। কি যে করি! অবলা জীব, ওদের কি কোন বোধ-বুদ্ধি আছে? যখানে মানুষই আজ মনুষ্যত্বহীন!


লেখক পরিচিতি : রিঙ্কু চট্টোপাধ্যায়
পুরুলিয়ার এক সাধারণ গৃহবধূ, বিখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের অনুপ্রেরণায় লেখালিখি শুরু। আনন্দবাজার পত্রিকা ছাড়াও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখি। সম্প্রতি হাজারদুয়ারী সাহিত্য উৎসবে রেনেসাঁস পুরস্কারপ্রাপ্ত বই "ঘুরে বেড়াই কাছে-দূরে" এ বছর পুরুলিয়া বইমেলায় প্রকাশিত দশম বই "কিছু সময় পেছনে হাঁটি "

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

দীপায়ন