লেখক : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
।। ১ ।।
দুপুরবেলায় নির্জনতা ঘেরা চিলেকোঠা
কাক পক্ষী কেউ নেই
শুধু তুই আর আমি
চারদিকে শোরগোল
তার মাঝে আমরা একা স্বাদ খুঁজি স্বাধীনতার
এভাবেই দিন কেটে যায়।
একদিন…
চিলেকোঠা, ছাদ সব ভেঙে পড়ে আধুনিকতায়
তুই আমি আজও ঘরে একা
ভেসে চলি স্বাধীনতায়
এভাবে কেটে যায় আরও কয়েক বছর
একদিন…
আমাদের রহস্য উন্মোচিত হয় তোর সামনে
তোর ছায়া যেন তোর আরেক প্রতিবিম্ব
তুই আমায় কাছে পেতে চাস তোর মত করে
তুই যদি চাস আমি তাইই মানব
তারপর…
তোর জন্য বানাই আমি সুউচ্চ এক অট্টালিকা
এত উঁচু থেকে পৃথিবীর রূপ লাগে অন্যরকম
আর অন্যরকম লাগে তোকে
তোর দিকে চেয়ে দেখি আমি
তুই চেয়ে দেখিস তোর ছায়া
আমার ছোঁয়ায় বান আসে তোর শরীরে
সর্বনাশী বান
বানের স্রোতে ভেসে যাই আমিও
মুখ লুকিয়ে ডুব দিই তোর সাগরে
এভাবে কেটে যায় দিন মাস বছর
তারপর…
আজ সেই চিলেকোঠা নেই
নেই কোনো আধুনিকতা
তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আজও
অনুভব করি অন্য এক স্বাধীনতা
।।২।।
রোমাঞ্চের খোঁজে আমি হারিয়েছি জ্ঞান
ডুব দিয়েছি তোর নেশায়
তোর নেশায় বুঁদ হয়ে আমি সব ভুলেছি আজ
ভুলেছি জীবন, ভুলেছি সব কাজ
তুই অপেক্ষা করিস আমার জন্য পাহাড়ের মত
যুগ যুগ ধরে
পাহাড়ে দুপুরের আলোয় তৈরি হয় তোর ছায়া
এভাবে কেটে যায় দুপুরগুলো
শেষ হয়ে যায় জীবনের চাওয়া
তুই আর তোর ছায়া মিলে আমার জীবন
যেখানে তোকে পাইনা জাপটে ধরি তোর ছায়া
রোদ উঠলে ছায়া মিলিয়ে যায়
কেটে যায় নেশা
তোর নেশায় ডুব দিই আবার
দেখতে পাই তোর সাদা আর ধূসর অবয়ব
উল্টে যায় পৃথিবী তোর,
উল্টে যায় আমার ভাবনা সব
আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি তোকে
আর তোর ছায়া
এভাবেই কাটে আমার দিনগুলো
তবু আমি কাটাতে পারিনা তোর মায়া,
তোর মোহ,
তোর প্রেম,
তোর ভালোবাসা
তোর নেশায় আমি নিঃশেষ হয়ে যাই রাতের মত
আর তুই অপেক্ষা করিস পাহাড়ের মত
যুগ যুগ ধরে।
পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করি আমি
রাস্তা বরাবর ছুটে যায় নদী
আমিও ছুটি যুগ যুগ ধরে
নদী শুকিয়ে মিলিয়ে যায় পাহাড়ে
তবু রাস্তা শেষ হয়না আজও
আমি আজও ছুটে চলি
পাহাড় থেকে পাহাড়ে
।।৩।।
তোকে ভালবাসতে বাসতে ভালবেসেছি তোর ছায়া
তোর ওপর রোদ পড়ে যখন, সেটাই আমার পাওয়া
রোদের তেজে জ্বলজ্বল করিস তুই
আগুনের মত
তোর তেজে শিহরণ জাগে মনে
দিনের শেষে তোর ছায়া হয় দীর্ঘ
পেরিয়ে যাই পাহাড়, সমুদ্র, তবু
আমি পেরোতে পারি না তোর ছায়া
তোর ছায়া আমায় ঘিরে ধরে গ্রহণের মত
গিলে খায় আমাকে
শেষ হতে থাকে আমার অস্তিত্ব
।।৪।।
রাত বাড়লে তোর ছায়া দীর্ঘতর হয়
মায়াবী মনে হয় তোকে
তোর ছায়া ছুঁতে চেয়ে আমি
ভেসে চলি অজানা এক স্রোতে
উপগ্রহে তৈরি করি পাহাড়
পাহাড়ের গুহায় প্রাণ পায় শরীর
একে বেঁকে নদী নেমে আসে
জলে প্রচণ্ড স্রোত সেই নদীর
বাঁধ দিলে বাঁধ ভেঙে যায়
পাহাড়ের ওপর রেখে আসি তোকে
তুই কেন নিচে নেমে আসিস
নিচে আমি যে ভেসে চলি স্রোতে
স্রোতে ভাসতে ভাসতে আমি জল হয়ে যাই
জল হয়ে তেষ্টা মেটাই তোর
আলো ফুটলে তোর ছায়া ক্ষুদ্রতর হয়
এভাবেই নেমে আসে ভোর।
লেখক পরিচিতি : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। লেখা তাঁর নেশা। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। দৃষ্টি, বালিঘড়ি এবং স্মরণে রবি এই কবিতার সংকলনগুলিতে রয়েছে তাঁর কবিতা । এছাড়া তথ্যচিত্র বা শর্ট ফিল্ম পরিচালনা করেন তিনি। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ঘুরতে খুবই ভালবাসেন। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।