মতিচুরের প্যাকেট

লেখক : ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জ্জী

আড়াআড়ি গার্ডার মোড়া প্যাকেটে চারটে মতিচুরের লাড্ডু দিয়ে গিয়েছে তন্দ্রার মা। সেই প্যাকেটটা দেখেই, কুড়ি বছর আগের একটা মুহূর্ত হঠাৎ যেন ভেড়ুল হাওয়ার মত পাক খাচ্ছে নিঃসঙ্গ অবনী বাবুর খাঁ-খাঁ হৃদয় জুড়ে। তাঁর অয়নও তো এমনই আলোড়ন তুলেছিল মাধ্যমিকের ফল বেরনোর দিন। খুশির ঢেউ উপচে পড়েছিল তাঁদের সংসারে। ওর মা, এমনই মিষ্টির প্যাকেট বিলিয়েছিল সেদিন।

অয়ন শুধু পাঠ্যবইয়ে বন্দী ছাত্র ছিল না, ছিল এক স্বতন্ত্র জ্যোতিষ্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষাতেই ছিল সাফল্যের জয়গান। সোনালী পদক উঠেছিল তার মুঠোয়। অথচ নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় গবেষক, একদিন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের তকমা মাথায় নিয়ে, চিরতরে বিদায় নিল পৃথিবী থেকে। সময়ের নিষ্ঠুর স্রোতের চোরা ঘূর্ণিতে এক প্রতিভার অপমৃত্যু, ঘুমের ঔষুধে স্বপ্নের অকাল সমাধি। অস্ফুট কণ্ঠে বিড়বিড় করে মতিভ্রান্ত অবনীবাবু তাই মতিচুরের প্যাকেটটাকেই শুধিয়ে বসলেন, “কেউ আবার তোকে কোনদিন অযোগ্য বলবে না তো?”

টপটপ করে গড়িয়ে পড়া নোনাজলে ভিজে যাচ্ছে মতিচুরের প্যাকেট। পুত্রহারা পিতার দীর্ঘশ্বাস মিশে যাচ্ছে প্রতিবেশীর সাফল্যের হাসির বিপরীতে। তাঁর বুকের মধ্যে এতক্ষণে লহরা দিয়েছে এক করুণ সুর, তারই প্রতিধ্বনি শোনায়, “আমার অয়ন… ‘অযোগ্য’ ছিল না, ও আমার ইউনিভার্সিটির টপার ছিল।”


লেখক পরিচিতি : ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জ্জী
ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জ্জী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

দীপায়ন ৩ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ছবিতে ক্লিক করুন