সার্বজনীন ইসলাম ও কৃষ্ণ বনাম মুহাম্মদ (সাঃ)

লেখক : ড. মফিজ এম মহিউদ্দিন

 

বাণী মহিউদ্দিন-১

নবী (সাঃ) এর কথাই আল্লাহর কথা, নবী প্রেমই আল্লাহর প্রেম, নবী আনুগত্যই আল্লাহর প্রতি আনুগত্য- তা জানতে মানতে ও বুঝতে হবে হে আত্মভোলা মানুষজন!

বাণী মহিউদ্দিন-২

জগতের প্রতিটি সৃষ্টিই স্রষ্টার আশেক (গোপ-গোপী-রাধা)- হোক সে নারী বা পুরুষ; একমাত্র প্রেমাস্পদ হলো আল্লাহ (কৃষ্ণ-মুহাম্মদময়)।

নবী প্রেমের একটি অনবদ্য ইতিহাসঃ

১৯২৩ সালের সময়কাল। ভারতবাসী কাঠ মিস্ত্রী ইলমুদ্দিনের ফাঁসীর বছর। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি সে সময়ে প্রিয় হুজুরপুর নূর রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে অবমাননা করে ” রঙ্গিলা রাসুল ” নামক বই প্রকাশ করায় সেই বইয়ের প্রকাশক রাজপালকে হত্যা করেন রাসূল প্রেমিক বীর ইলমুদ্দিন। অতঃপর বিচারিক আদালতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তৎকালিন ভারতবর্ষের স্বনামধন্য বড় বড় উকিল-ব্যারিষ্টারগণ তার পক্ষে একতাবদ্ধ হন এবং তারা তাঁকে এ পরামর্শ দেন যে, ইলমুদ্দীন! আদালতে তুমি শুধু এটুকু বলবে যে, তখনেআমার মাথা ঠিক ছিল না, বাকীটা আমরা দেখবো।’ কিন্তু রাসূল প্রেমিক বীর ইলমুদ্দিন সে কথায় কর্ণপাত না করে বরং হাসতে হাসতেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিরুদ্দিগ্ন চিত্তে নির্ভাবনায় সদর্পে বলেন, আমি স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে ঐ পাষণ্ডকে হত্যা করেছি, যে আমার প্রিয় নবীকে অবমাননা করে বই ছেপেছে। সে আমার রাসূল (সাঃ)কে, রাঙ্গিলা রাসূল বলে তিরস্কার করেছে।’

এ মর্মে ইতিহাস আরো সাক্ষ্য দেয়- পরে যখন উকিল-ব্যরিষ্টারগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এভাবে বলতে গেলে কেন? তখন প্রতিউত্তরে তিনি জানালেন- ‘আমাকে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) স্বপ্নে বলেছেন, ইলমুদ্দীন! তাড়াতাড়ি আসো, আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি!’

ইতিহাস আরো সাক্ষ্য দেয়- সেই বীর শহীদ ইলমুদ্দিনের জানাজার ইমামতি করেছিলেন ভূবন বিখ্যাত বুজুর্গ আল্লামা জাফর আলি খান এবং তাঁর লাশ বহনকারী খাটিয়া বহনসহ লাশ দাফন করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ও পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ড. ইকবাল ।’ স্যালুট ইলমুদ্দিন!

নবীজি (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তিকারীদের পরিণতিঃ

নবীজি (সাঃ)-এর বিয়ে নিয়ে কটুক্তিকারী একজন ভারতীয় সরকারী দলের (বিজেপি) নেত্রী নূপুর শর্মা ও অপরজন সোসাল ওয়ার্কার নবীন কুমার জিন্দাল। তাদের নিয়ে কোনো বিষোদগার আমার এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়, বরং তারা যে নিজেদের ধর্মপুরুষদেরকেই প্রকারান্তরে অবমাননা করেছে ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় সূত্রে সেই হিতাহিত জ্ঞানও ঐ মূর্খ দ্বয়ের নেই বা ছিলো না।

শর্মা-জিন্দালদের গোপন ইতিহাসঃ

নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালরা হলো ভারতীয় উগ্র মৌলবাদী সংগঠন ‘আরএসএস’ এর  নীতিনির্ধারক। তাদের মূল এজেন্ডা হলো মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধীতার আড়ালে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা, যার ফসল নরেন্দ্র মোদির বর্তমান বিজেপি সরকার। ভারত ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস’ নামক একটি কট্টরপন্থী হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন এটি- এ সংগঠনকে ভারতের বর্তামন বিজেপি সরকারের আঁতুড়ঘর বলেও অভিহিত করা হয় বোদ্ধামহল কর্তৃক। তাদের মতে, তাদের নিজেদের নীতি-ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনে সহিংস পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধা নেই এহেন উগ্রসংগঠন আরএসএস-এর। ভারতের বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের হত্যার দায়ও তাদের রক্তে রঞ্জিত। যেমন ভারত জনক শ্রীমান মহাত্মা গান্ধীজি (তাঁকে গুলি করে হত্যা করে নাথুরাম বিনায়ক গডসে নামের এক আরএসএস সদস্য।’

ভারতে বাবড়ি মসজিদ ভাঙ্গা ও গুজরাটে ট্রেনের বগি ভর্তি মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে মারার কাহিনীতে কলঙ্কিত এই ‘আরএসএস’- এরূপে ভারতবর্ষজুড়ে মুসলমানদের নিপিরণ-হত্যার কলকাঠি হলো এই আরএসএস! যাদের পৃষ্ঠপোষক নূপুর শর্মা-জিন্দালরা।

অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষ আজ মুসলিম নিধনযজ্ঞের রক্তের হুলিখেলায় জর্জরিত। নুপুর শর্মা বর্তমান বিজেপি সরকারের মনোনীত মুখপাত্র। মুসলমানদের মূল শত্রু “আর এস এস- “বিজেপি- অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষবাসী নয়, যেখানে রয়েছে প্রায় ২০-২২ কোটি মুসলমানের বসতী; বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় মনে রাখতে হবে উগ্র মাথাগরম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরকারকে।

ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতেই হয়ঃ

আমার এক বন্ধু সারাবেলা সোহেল এ মর্মে ফেসবুক কলামে উল্লেখ করেছেন-

মোহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে ৬ বছর বয়সে বিবাহ করেন এবং ৯ বছর বয়সে মা আয়েশা (রাঃ) সাথে সংসার জীবন শুরু করেন। সে সময়ে নারীদের এমন বয়সেই বিবাহ হতো। সে কালে নারীরা এরকম বয়সেই প্রাপ্তবয়স্কা হতো।

চলেন আমরা,, হিন্দু ধর্মের কিছু ইতিহাস জেনে আসি… হিন্দু ভাই/বোনেরা যাদের কে উপাসনা করে/ দেবতা মানে,, তাদের ইতিহাস…

রামচন্দ্র যখন সীতাকে বিয়ে করে,,তখন সীতার বয়স ছিল ৬ বছর,, রেফারেন্স ( স্কন্দ পুরাণ, ৩.২.৩০.৮-৯) ও বাল্মিকীর রামায়ণ, অরন্য খন্ড ( ৩.৪৭.৩ -১০),, তারা জয় শ্রী রাম বলে যাদের উপাসনা করে,, তাদের ঈশ্বর ৬ বছরের সীতা কে বিয়ে করে শিশু কামী হলো না..!!! আর মোহাম্মদ সাঃ ৬ বছরে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সে সংসার করেই মোহাম্মদ সাঃ শিশুকামী হয়ে গেলো..!!!

তার পর আসেন….

শ্রী কৃষ্ণ যখন রুক্মিণী কে বিয়ে করে,, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর,, রেফারেন্স ( স্কন্দ পুরাণ ৫.৩.১৪২.৮-৭৯)শ্রী কৃষ্ণ যখন রুক্মিণীর সাথে যৌনক্রিয়া শুরু করে,তখন সে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠিনি এবং যৌনতা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিল না, ফলে শ্রী কৃষ্ণ যৌনক্রিয়া করাই রুক্মিণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,, রেফারেন্স ( ব্রাহ্ম, বৈবর্ত পুরাণ কৃষ্ণ জন্ম খন্ড ১১২,১-১০) ,, তাদের ঈশ্বর ৮ বছরের রুক্মিণী কে বিয়ে করে শিশুকামী হলো না,, মোহাম্মদ সাঃ শিশুকামী হয়েগেলো.!!

শিব যখন পার্বতী কে বিয়ে করে, তখন তার বয়স ছিল ৮ বছর

রেফারেন্স ( শিব পুরাণ, রন্দ্র সংহিতা পার্বতী খন্ড ৩.১১,১-২)

তাদের ঈশ্বর শিশুকামী হলো না, মোহাম্মদ সাঃ শিশুকামী হয়েগেলো..!!!

এইতো কয়েক বছর আগের ঘটনা, রবিন্দ্রনাথ ১০ বছর বয়সের মৃণালিনী দেবী কে বিয়ে করে এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৫ বছরের এক মেয়েকে বিবাহ করে যাকে সাহিত্য সম্রাট বলে থাকি,,তারা শিশু কামী হলো না,,মোহাম্মদ সাঃ শিশুকামী হয়ে গেল..!!

এইতো কয়েক বছর আগের ঘটনা,, যে সময় হিন্দু সমাজে ১১ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে না দিতে পারলে,, তাদেরকে অভিশাপ মনে করতো, এবং অভিভাবকের নরকে যাওয়ার হুমকির প্রথাও চালু ছিলো,, —- তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ আর আমি চোর বটেই..!!!

অতঃপর এবার আমার সংগৃহিত তথ্যমতে শ্রীকৃষ্ণ কথনে আসা যাকঃ

শ্রীকৃষ্ণ কথনঃ

[বিঃদ্রঃ- অত্র বিবরণী সংকলিত হয়েছে শ্রী শিব শঙ্কর চক্রবর্তী রচিত জ্ঞানমঞ্জুরী- প্রথম খÐ ও শ্রীমতি মঞ্জু নন্দী মজুমদার সংকলিত অমৃত সন্ধানের কথা’ গ্রন্থ হতে প্রশ্নোত্তর আকারে]

প্রশ্ন-৩, পৃঃ ৬৫ঃ শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ও সন্তান সংখ্যা কত?

উঃ বিতর্কিত বিষয়ে সঠিক তথ্য পরিবেশন সম্ভব নয়। তার প্রধান তিনজন মহিয়সীর নাম রুক্ষ্সিনী, সত্যভামা, জাম্ববতী।

মন্তব্যঃ নিষ্প্রয়োজন।

প্রশ্ন-৪, পৃঃ ৬৫ঃ রাধার নাম কৃষ্ণের নামের আগে লওয়া হয় কেন? রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিলো (আত্মীয় হিসেবে)?

উঃ প্রকৃতি বা স্ত্রী হলো শক্তির আধার। শক্তি ভিন্ন পুরুষ অচল। তাই কালির পায়ের নীচে শিব। শ্রীকৃষ্ণের শক্তি হলো রাধা। তাই রাধার নাম পূর্বে লিখা হয়। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে রাধা এবং কৃষ্ণ এক। লৌকিক সম্পর্কে রাধা কৃষ্ণের মামী। আয়ান ঘোষ শ্রীকৃষ্ণের গ্রাম সম্পর্কে মামা। ভাগবতে রাধা নাম উল্লেখ নেই। ব্রহ্মবৈবর্ত পূরাণে রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্কিত কাহিনী বর্ণিত আছে। (প্রাগুক্ত পৃঃ ৬৫)

মন্তব্যঃ নিষ্প্রয়োজন।

প্রশ্ন- ২৩ (পৃঃ ৬৫): শ্রীকৃষ্ণের ৩জন স্ত্রী- রুক্সিনী, জাম্ববতী ও সত্যভামা। রাধা শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী নন। পরস্ত্রী রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণের প্রেম ও মিলন কিভাবে বৈধ এবং শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার যুগল মুর্তি কেন আমরা আরাধনা করি?

উঃ শ্রীরাধা কৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি। স্বরূপত তাঁর ভিন্ন দেহে একই শক্তির প্রকাশ। কৃষ্ণের প্রতি রাধার অনুরাগকে অনেকে বলেন পরমাত্মার প্রতি জীবাত্মার অনুরাগ। বাহ্যত কংসবধের পূর্ব পর্যন্ত, যখন কৃষ্ণের বয়স মাত্র এগার বছর- সে পর্যন্ত গোপ-গোপীদের সাথে শ্রীকৃষ্ণের লীলাসমূহ হয়েছিলো।

মন্তব্যঃ

হে শর্মা-জিন্দালরা! তোমাদের দেবতা মাত্র নাবালকসুলভ এগার বছর বয়সেই যদি প্রেমলীলা খেলতে পারে নিজের মামীসহ অবাধে পরের বউদের নিয়ে সেখানে বৈধ ও সামাজিকভাবে মুহাম্মদ (সাঃ) কেন ৮-৯ বছরের শারীরিক গঠনশৈলীতে উন্নত একজন নারীকে বিয়ে করতে পারবেন না ঐশী নির্দেশ পেয়ে? এভাবে শুধুমাত্র প্রশ্নোত্তর ভাবেই লিখতে গেলে পুরো শত পৃষ্ঠার একটি বই হয়ে যাবে সনতানধর্মীকথনেই- জ্ঞানমঞ্জরী ও অমৃত সন্ধ্যানের কথা গ্রন্থ দ্বয়ের আলোকে। তাই সেদিকে আর দৃস্টি দিলাম না।

প্রেমলীলায় মত্ত রাধাকৃষ্ণ

গোপিনী পরিবেষ্টিত কৃষ্ণঃ

=================

[‘প্রশ্নঃ ৬৮, জ্ঞানমঞ্জুরী, পৃঃ ৫১] গোকুলে গোপীদের প্রত্যেকের স্বামী আছে। নারীদের উপপতি দোষণীয়। গোপীগণ কেন শ্রীকৃষ্ণকে উপপতি হিসেবে লাভ করে সকল সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে শীর্ষস্থান লাভ করেছিলো?

উঃ গোপী অর্থে অনেক কিছু বুঝায় কিন্তু বৃন্দাবনবাসী সকলেই গোপী।গোপনে যারা ভজনাদি করেন তারাই গোপী। এখানে গোপী বলতে শুধু স্ত্রীলোক বুঝায় না; পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের আরাধনীয়। পুরুষ গোপীগণ শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যে যান নি, স্বামীগণ জানতেন যে, তাদের স্ত্রী শ্রীকৃষ্ণের কাছে যাচ্ছেন, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর তাই বাধা দেননি। তাই গোপীগনের শ্রীকৃষ্ণ সন্নিধান নিন্দনীয় না হয়ে বন্দনীয় হয়েছে।

এবার বিষয়োক্ত প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণে আসা যাক সার্বজনীন ইসলামের স্বরূপ উম্মোচনে, যেখানে সার্বজনীন সনাতন ধর্ম ইসলামেরই অঙ্গ।

 

হিন্দু সনাতনী কলেমার সারকথনঃ

===================================

‘একম্ দ্বিতম নেহি, একম্ সৎ’- এক ভিন্ন দ্বিতীয় নেই, তিনিই একমাত্র আছেন। যা ইসলামেরই কালেমা শরীফ- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’- আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ-নির্ভরতা-বান্ধব নেই। এই কলেমা শরীফের স্বপক্ষে কোরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন- সূরা ত্বা-হা ৯৮ আয়াতে বলা হয়েছে-

ইন্নামা ইলাহুকুমু-ল্লাহুল্লাজি’ লা ইলাহা ইল্লাহুওয়া, ওয়াসিয়া কুল্লা শাইয়্যিন ইলমা- তোমাদের মাবুদ (বান্ধব) তো কেবল আল্লাহতায়ালাই; তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মাবুদ (বান্ধব) নেই; তিনিই তাঁর (কালেমার) জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।- ত্বাহাঃ ৯৮ আয়াত

এর মানে সনাতন হিন্দুগণ ইসলামের কালেমা শরীফই পাঠ করে থাকেন। সনাতন মন্ত্র ‘ওঁ (অ-উ-ম)’ মানেই মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসা ধ্বনী, যা তারা মহাদেব নামে ‘ম’ অর্থ বুঝে থাকে। এ মর্মে যথার্থ ব্যাখ্যাও রয়েছে। ‘প্রণব বা ওঁ-কারই বেদের নির্যাস (জ্ঞানমঞ্জুরী, পৃঃ ১৮)।’

আমার এ কথায় যাদের মন-মগজে সন্দেহের বীজ উপ্ত হয়ে উঠেছে তাদের জ্ঞাতার্থে আরো তত্ত্ব হলোঃ

হিন্দু ধর্মে সনাতন হলো পুংলিঙ্গ বাচক শব্দ, যার স্ত্রী লিঙ্গ হলো ‘সনাতনী’। বাংলা অভিধানে ‘সনাতন’ অর্থ হলো- হিন্দুধর্ম, অপরিবর্তনীয়-অবিনাশী ধর্ম, ঈশ্বর, বৈষ্ণব, গোস্বামী, নিত্য, শ্বাশত, চিরবর্তমান, বহুকাল প্রচলিত বিশেষ; আর ‘সনাতনী’ অর্থ হলো- লক্ষী, সরস্বতী, নিত্যরূপিনী, চিরকালের প্রাচীনপন্থী।

হিন্দু ধর্মের অবতারদের মূল মর্মবাণীই হলো মুহাম্মদ বা ম-হ-দ। মহাদেব, কৃষ্ণদেব মূলতঃ মুহম্মদ (সাঃ) এরই পূর্ববর্তী রসূল বা ধর্ম প্রচারক হিসেবে বিবেচ্য। আর সত্যযুগ বলতেও মুহাম্মদী যুগ এবং কল্কী অবতার বলতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবকালকেই বুঝানো হয়েছে।

‘রজঃ সত্ত্বঃ ত্বমঃ এই তিন গুণ বৃক্ষের শাখার ফল মাত্র। যেহেতু রজঃগুণের স্বার্থের স্বার্থি ব্যক্তি ধর্মদেব জন্ম করিয়া পরিণত করিতে অপারগ, তাই সত্য গুণ স্বার্র্থের রক্ষক বা পালন কর্ত্তা যে বিষ্ণু তাই তাহা দ্বারাই রক্ষা হইয়া থাকে। আবার যদি এই দুই গুণ বিশিষ্ট স্থূল পদার্থ গুলি ধ্বংস করিতে ত্বম গুণের প্রয়োজন হয়, তবে আবার রজ গুণ পদার্থের প্রথম গুণে ধর্মই যদি ঈশ্বর হন তবে বিষ্ণু কিম্বা মহাদেব আবার তাহারাই বা কেহ ঈশ্বর সর্বগুণে গুণী এবং তিনি অদ্বিতীয় পদার্থ।’(মদীনা কল্কী অবতারের ছফিনা; পেশগুই)

অর্থাৎ এক্ম দ্বিতম নেহী, এক্ম সৎ (হিন্দু কলেমামন্ত্র)।

যেহি মুর্শীদ সেহি রাসূল খোদাও তিনি হন-(লালন)।

সত্যম শিবম সুন্দরম- (হিন্দু জপমন্ত্র)।

“লায় লং আবদুলং সু পুত্র মলং’ এর অর্থ ‘কলেমায়ে তৈয়ব’। এটাকে কলেমায়ে অথর্ব বলা হয়। অর্থাৎ চারি বেদের সর্বশেষ বেদ অথর্ববেদ, এটাই কোরান। তা পাঠ করলে মানুষ মুসলমান হয়ে যায়, এ কারণে তাকে আর নিজেদের সমপ্রদায়ের মধ্যে দাখেল হয় না।” (শিররেহক্ব জামেনূর)

বেদের সুলুক বা আনকাহি মন্ত্রঃ

=============================

‘লা-ইলাহা’ হারনি পাপাম; ইল্লাল পারম পাদাম; জান্ম ওয়াই কুণ্ডত্ প্রাপ্তি তো যপে নাম ‘মুহাম্মাদাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’

অথর্ববেদে আরো বলা হয়েছে- ‘আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদরকং’- আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) আসবেন’।

হিন্দুদের বিশ্বাস মতে- আনকাহী মন্ত্র ‘ছারকাতে আলমে’ তথা পৃথিবীর রহস্যময় স্তর হতে পাওয়া গিয়েছিলো। তা মুমুর্ষু ব্যক্তির মৃত্যু শয্যায় যখন জান বের হতে চায় না তখন তাদের সাধুজন বা পণ্ডিত ব্যক্তি কর্তৃক মহাভ্রমাণ্ডকে তথা তাদের মহাদেবতাকে ডাকা হয়ে থাকে এ মন্ত্র বলে। তাই এটিকে তারা অতীব গোপনীয় ‘আনকাহি মন্ত্র’ বলে থাকে, যা কাউকে যথাতথা বলার নয়। উত্তরায়ন বেদে যার পরিচয় রয়েছে এভাবে-

‘লা-ইলাহা হরতি পাপম, ইল্লা-ইলাহা পরম পদম/জন্মে বৈকুণ্ঠ অপ ইনতি, ত-জপি নাম মুহাম্মদ।’

অর্থাৎ ‘ লা-ইলাহা’র আশ্রয় ব্যতীত পাপ মুক্তির কোনো উপায় নেই। ইলাহ তথা আল্লাহর আশ্রয়ই প্রকৃত আশ্রয়। আর চিরকাল স্বর্গ লাভের বাসনা করলে ‘মুহাম্মদ (সাঃ)’ নাম জপো।’ অতঃপর ‘অল্লোপনিষদে’ বলা হয়েছে- ‘আল্লো মহমদকং বরস্য (দঃ)’; অর্থাৎ ‘আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) কেই সবাই অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ করো।’

গায়ত্রীমন্ত্র ও অথর্ব বেদ কথনঃ

=====================

সনাতন ধর্মের গায়ত্রীমন্ত্র মূলত পূর্নাঙ্গ কালেমা শরীফের জপমন্ত্র, যদিও তারা প্রকাশ্যে তা বলে বেড়ায় না। যথার্থ গায়ত্রী মন্ত্র প্রসঙ্গে ‘অমৃত সন্ধানের কথা’ গ্রন্থে (স্বামী ভুতেশানন্দজীর কথোপকথন ও ভাষণের সংকলন, শ্রীমতি মঞ্জু নন্দী মজুমদার সংকলিত, পৃঃ ৭৩, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, মার্চ ২০০৮) ইঙ্গিতস্বরূপ বলা হয়েছে-

‘গায়ত্রী একটি বৈদিক ছন্দের নাম। এর চারটি পদে ছয়টি করে মোট চব্বিশটি অক্ষর থাকে। গায়ত্রী ছন্দোমধ্যে প্রধানা। বিশেষতঃ ব্রাক্ষণগণের কাছে গায়ত্রীমন্ত্র অতি আদরণীয়। গায়ত্রী অবলম্বনে ব্রক্ষ উপদিষ্ট ও উপাসিত হন। গায়ত্রী শব্দটি গানার্থক গৈ-ধাতু ও ত্রাণার্থক ত্রৈ-ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। এখানে গায়ত্রী শব্দ ব্রক্ষের লক্ষক। গায়ত্রী নামক ছন্দ অবলম্বন করে ঐ গায়ত্রীতে অনুগত ব্রক্ষে চিত্ত সমাহিত করতে হবে-এইটি তাৎপর্য (ব্রক্ষ সূত্র, ১/১/২৫)’

বাস্তবিকে বর্ণিত ২৪ অক্ষর (হরফ)যুক্ত গায়ত্রী মন্ত্রটিই হলো ইসলামের কালেমা শরীফ, যা চার চরণময়, প্রতিটি চরণ ৬ হরফযুক্ত; যেমন- লা-ইলাহা (৬ হরফ), ইল্লাল্লাহু (৬ হরফ), মুহাম্মাদুর (৬ হরফ), রাসূলুল্লাহ (৬ হরফ)= ২৪ হরফযুক্ত কালেমা শরীফ- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।’ পক্ষান্তরে সনাতনধর্মীগণ উক্ত ২৪ হরফযুক্ত ইসলামী কলেমা শরীফটিকে গুপ্ত রেখে গায়ত্রী মন্ত্র বলে  ঋগে¦দ-৩/৬২/১০ বর্ণিত এই মন্ত্রটিকে প্রচার-প্রসার করে, যার মধ্যে বর্ণিত ২৪ অক্ষর/হরফের কোনো বালাই নেই; যেমন- ‘ওঁভূর্ভুবঃ স্ব। তৎ-সবিতুর বরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি। ধীয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।’

অর্থাৎ বর্ণিত বিশ্লেষণে প্রমাণিত হলো যে, সনাতনধর্মীগণ মুহাম্মদী প্রশংসাগীতিই গেয়ে বেড়ান মহাদেব নামে। যে কারণে হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) বলেছেন- ‘ “লায় লং আবদুলং সু পুত্র মলং’ এর অর্থ ‘কলেমায়ে তৈয়ব’। এটাকে কলেমায়ে অথর্ব বলা হয়। অর্থাৎ চারি বেদের সর্বশেষ বেদ অথর্ববেদ, এটাই কোরান। তা পাঠ করলে মানুষ মুসলমান হয়ে যায়, এ কারণে তাকে আর নিজেদের স¤প্রদায়ের মধ্যে দাখেল হয় না।’

সনাতন ধর্মের চার বেদ এর সর্বশেষ বেদ হলো অথর্ব বেদ, যা কোরআনের সুর কথন। উক্ত অথর্ব বেদ এর চব্বিশতম কাণ্ড পরবর্তী অংশগুলো কোরআনের বাণী কথনের মর্মার্থ বটে বিধায় বর্তমানে বাজারে প্রচলিত অর্থব বেদ প্রকাশনায় উক্ত চব্বিশতম কাণ্ড কথনগুলো ছাপা নেই। আমি অধম গবেষণার স্বার্থে বহু খোঁজাখোঁজির পরও তা সংগ্রহ করতে পারিনি। আরো রহস্যময় বিষয় যে সনাতনধর্মীগণ সেই কারণে অথর্ববেদকে অনেকটা বয়কট করেই চলে। প্রমাণঃ

[জ্ঞানমঞ্জুরী, পৃঃ ৬৪, প্রশ্ন-৯৩] বেদ চারটিকে গীতায় বেদত্রয়ী বলা হয় কেন? এই বেদত্রয়ীতে কোন কোন বেদকে বুঝায়?

উঃ বেদ চারটি- ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। গীতাতে ঋক, সাম ও যজুর্বেদের উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, যজ্ঞের জন্য ঐ তিনটি বেদের প্রয়োজন। অথর্ব বেদ যজ্ঞ ভিন্ন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়—জাগতিক বিষয়াদি সন্নিবিষ্ট আছে। এ জন্য অথর্ব বেদকে অনেকে বেদ বলে পুরোপুরি মানতে চান না।’

অর্থাৎ প্রমাণিত হলো যে, অথর্ব বেদ-এর বর্ণনার সাথে কোরআনের বাণীর বর্ণনার মিল রয়েছে বিধায় এবং কালেমা শরীফ এর গুপ্তভেদ তাতে বর্ণিত রয়েছে বিধায় তারা তা এখন বয়কট করে চলে প্রায়।

উপসংহারপরিশেষ বাণী কথনঃ

বহুবিধ সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টাকে চিনে ও বুঝে নিতে হয়; বিশেষত: সেরা সৃষ্টির জাহেরী খোদা নবী-ওলী দর্শনে।
যার যার গুরু-মুর্শীদই তার তার কৃষ্ণ-মুহাম্মদ (নায়েবে রাসূল-অবতার); মুরিদ-শিষ্যগণ গোপ-গোপী-আসহাব।


[মতামত লেখকের নিজস্ব]

লেখক পরিচিতি : ড. মফিজ এম মহিউদ্দিন
অত্র লেখক বর্তমানে মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফে ইসলামী তাসাউফ চর্চা-গবেষণা ও কাতেব এর দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।