প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ ও মিসর

লেখক : হৃদয় হক

ব্যক্তিগত ভাবে আমার ছোটদের বইপত্র পড়তে ভালো লাগে, মজা লাগে। এখনো সুযোগ পেলে ছোটদের বইয়ের পাতা ওল্টাতে ভুলি না। সে বই যেকোনো বিষয়েরই হোক না কেনো আমি ঠিকই ওল্টাবো। এক্ষেত্রে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়। এই যেমন — অনেক কিছু জানার ব্যাপার তো আছেই সেইসাথে কখনো কোন ছোট ছেলেমেয়েদের যদি বই দেয়ার ব্যাপার-স্যাপার চলে আসে তাহলে অভিজ্ঞতা থেকেই দু-চারটে ভালো বইপত্রের কথা বলার সুযোগ হয়। আবার, জানা বিষয় হলে রিভিশনের কাজটাও একটু হয়ে যায়।

মিশরের ইতিহাস নিয়ে আমি আইজাক আসিমভের “মিসরের ইতিহাস” বইটি পড়েছি। সংক্ষিপ্ত ইতিহাস স্বরূপ চমৎকার একটি বই। সন্দেশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই অনুবাদ বইটির অনুবাদ দ্বিজেন্দ্রনাথ বর্মন সত্যিই দারুণ ভাবে করেছেন। তবে এ বইটি ছাড়াও বেশকিছু জনপ্রিয় বই আছে। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো অনির্বাণ ঘোষের “হায়রোগ্লিফের দেশে”। আবার, এবছর প্রকাশিত সাহাদত হোসেন খানের “প্রাচীন মিশর”। অবশ্য এদুটো বই আমি এখনও পড়িনি। কবে পড়বো তারো ঠিক নেই। তবে প্রথমটির কথা আগ্রহী প্রায় অধিকাংশ মানুষই জানেন। আর দ্বিতীয়টি সুবিশাল একটি বই। সম্ভবত মিশরের ইতিহাসের বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ বিষয়বস্তু নিয়ে এখন পর্যন্ত সেরা। তবে না পড়ে আপাতত সরাসরি কিছুই বলবো না। তাছাড়া, জানামতে ভাষাশহীদ গ্রন্থমালা সিরিজের অন্তর্গত মিশরের ইতিহাস নিয়েও বই আছে। কিন্তু, এসব ভালো বইয়ের একটিও ছোটদের বই নয়।

ছোটদের জন্য সভ্যতা নিয়ে বইপত্রের কথা উঠলেই পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর “কল্যাণীয়াসু ইন্দু” বইখানার কথা প্রায় সকলেরই কমবেশি মাথায় আসে। বইটি আমি পড়েছি। ছোটদের জন্য সত্যিই দারুণ একটি বই। এ বিষয়ের প্রথম পাঠ! খুবই সহজ ও সাবলীল ভাবে প্রায় সামগ্রিক বিষয়বস্তু এখানে বোঝানো হয়েছে। আসলে, ছোট থেকেই ছোটদের বিশ্ব ইতিহাস, বিশ্বসভ্যতা সম্পর্কে ক্ষুদ্র করে হলেও ধারণা থাকা উচিত, এতে করে ওরা মানবজাতি হিসেবে নিজেদের সম্পর্কে ও জগত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠবে, যা একজন সচেতন মানুষ মাত্রই করণীয়।

তবে, কল্যাণীয়াসু ইন্দু বইতে স্বভাবতই সব সভ্যতা নিয়ে আলোচনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, একেক সভ্যতার ইতিহাস, বিশেষত্ব ও গুরুত্ব একেক রকম। আলাদা আলাদা সভ্যতা হতে আমরা আলাদা আলাদা শিক্ষা পাই, যা সামগ্রিক ভাবে মানবজাতি হিসেবে আমাদের অর্জন। ফলে, প্রতিটি সভ্যতা সম্পর্কেএ আলাদা ভাবে মোটামুটি জ্ঞান থাকা সচেতন মানুষের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি উচিত ছোটদেরকে ছোট থেকেই তার নির্জাসের সুযোগ করে দেয়া। এ থেকেই চলে আসে ছোটদের জন্য প্রথমা প্রকাশনের “প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ” গ্রন্থমালার কথা।

প্রাচীন সভ্যতা সিরিজের গ্রন্থসমূহের রচয়িতা ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ। আমি প্রতিবছর আমার ছোট ভাই নতুন বোর্ড বই পেলে ঘেটে দেখি। ঠিক তেমনি ওর সমাজ বইটি ঘাটতে গিয়ে ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ স্যারের নামটি প্রথম পাই। পরে একদিন নিজের জন্য কিছু বইপত্র ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আবিষ্কার করি প্রাচীন সভ্যতা সিরিজের বইগুলো। আর, রচয়িতার নামটি দেখামাত্রই মনে পড়ে বোর্ডের সমাজ বইয়ের কথা।

প্রাচীন সভ্যতা সিরিজের প্রথম বই মিশর নিয়ে। সবেমাত্র পড়ে উঠলাম বইখানা। ভাষা বেশ সুন্দর এবং সাবলীল। এককথায় সুখপাঠ্য। প্রতিটি পৃষ্ঠায় আছে আলোচ্য বিষয়ের ওপর একটি করে রঙিন ছবি। আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে আছে ভূগোল, সভ্যতা, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ নানাবিধ! ভারিক্কি কিছু নেই তবে, আছে না বললেই নয় জাতীয় প্রয়োজনীয় ইতিহাস সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হলো — একটি কি দু’টি জাগায় আরো এক লাইন বাড়িয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে হয়তো ভালো হতো। তবে, এর তেমন কোনো আহামরি প্রয়োজন নেই। সবমিলিয়ে ছোটদের জন্য সুস্বাদু একটি বই। তবে শুধু ছোটদের জন্যই নয়। এ নিয়ে আগ্রহী ব্যক্তি মাত্রই বইটি পড়ে জানবেন এবং মজা পাবেন! আর আমার মতো ছোটদের বই মজা লাগলে তো কথাই নেই!

ছোটদের জন্য লেখা মোটেই সহজ কোনো কাজ নয়। তার ওপর আগ্রহের জন্ম দিতে প্রয়োজন রঙিন ছবি। আবার ছোটদের হাত যাবে বিধায় তার বাধাই হওয়া চাই মজবুত! ফলে, সব মিলিয়ে বইগুলোর দাম বেশি মনে হতেই পারে, কিন্তু বিদেশের তুলনায় এদেশের বইয়ের দাম বেশ কম! তাছাড়া, রকমারিতে এই সিরিজের সব বইয়ের একটি কালেকশনও আছে!

বাসায় যদি ছোট কেউ থাকে, থাকে কোনো আত্মীয়ের ছোট ছেলেমেয়ে, তবে তাদের জন্য এই সিরিজটি হতে পারে অন্যতম আনন্দদায়ক একটি পুরস্কার!


লেখক পরিচিতি : হৃদয় হক
শিক্ষার্থী। সময়ে অসময়ে প্রধানত জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে লেখালেখি করি।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

2 Comments

  1. আবদুস সালাম

    বই সম্পর্কে মতামত পেলাম।আসল বই এর ভিতর কী আছে জানাবো কেমন করে ।
    বইটির পি ভি এফ পেলে দেখা যেতো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।