বনগাঁর ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো

লেখক: জয়দীপ চক্রবর্তী

ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো নামে পরিচিত। ২০০০ সালে পুজোর আগে বন্যায় গোটা বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যায়। ষষ্ঠীর দিন কীভাবে দেবীর বোধন করা হবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ওই পরিবারের সদস্যরা। কারণ বোধনতলা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রবীণ সদস্যা শোভাদেবী বলেন, ‘‘কীভাবে দেবীর বোধন হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। শিব মন্দিরের উঁচু ঢিবিতে বোধন করবার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই ষষ্ঠীর আগে বোধনতলায় দু’তিন হাত জল কমে যায়। নির্দিষ্ট স্থানেই বোধন করতে পেরেছিলাম আমরা।’’

বন্যার মধ্যে ১৩০ জন এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরকে নিয়েই সে বার জমে উঠেছিল পুজো। কিন্তু বিসর্জন দেওয়ার আগে ফের বিপত্তি দেখা দেয়। প্রতিমা কীভাবে পাশে নাওডাঙা নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকেরা। হঠাৎই এক জেলে বউ সেখানে উপস্থিত হন, মাকে সিঁদুর পরানোর জন্য। তাদের সঙ্গে নৌকাও ছিল। সেই নৌকা করেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

৩০০ বছরেরও আগে স্বপ্ন পেয়েছিলেন গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বপ্নে দেখা মূর্তির আদলেই গড়ে উঠেছিল দেবীর মূর্তি। বনগাঁর ছয়ঘরিয়া এলাকার মানুষের কাছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো বেশ আকর্ষণের। একচালার দেবী প্রতিমা পুজো করা হয়। ঠাকুরের দু’টি হাত মানুষের মতো হলেও বাকি আটটি হাত কিন্তু বিড়ালের থাবার মতো দেখতে হয়। প্রতিপদে দেবীর ঘট বসে। ষষ্ঠীতে বাড়ির ভিতরে থাকা জোড়া শিব মন্দির। তার নীচে থাকা বেলতলায় দেবীর বোধন পুজো হয়। পুজোর দিনগুলিতে চলে চণ্ডীপাঠ। অতীতে গ্রামের মানুষকে পুজোয় খাওয়ানোর প্রথাও ছিল। দশমীর দিন আকাশে প্রথম সন্ধ্যা তারা উঠলেই নাওভাঙা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সেই পুজোর শুরু ৩০০ বছর ছাড়িয়েছে। বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী বলেছিলেন, তাঁর কোন রূপের পুজো করতে হবে! ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদাদা, গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন।

পুজোর বৈশিষ্ট্য

দুর্গার দশটি হাত থাকলেও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দু’টি হাত বড়, বাকি আটটি হাত ছোট! দু’পাশের কাঁধে রয়েছে ছোট ছোট চারটি হাত। অনেকটা বিড়ালের হাতের মতো! সে কারণে এই দুর্গাকে বলা হয় ‘বিড়ালহাত দুর্গা’।

মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদে চণ্ডীর ঘট বসানো হয়। পুজোর দিনগুলিতে চলে চণ্ডীপাঠ। ষষ্ঠীতে বাড়িতে থাকা জোড়া শিব মন্দিরের নীচে বেলতলায় হয় দেবীর বোধন।

বিসর্জনের আগে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা দেবীকে বরণ করেন। তারপর মহিলারা। নিয়ম মেনে দশমীর দিন আকাশে একটি সন্ধ্যাতারা উঠলেই বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ির প্রতিমা নাও-ডাঙা নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। বিসর্জন দেখতেও বহু মানুষ ভিড় করে।

ভোগ বিশেষত্ব

অষ্টমীর দিন যাঁরাই ঠাকুর দেখতে যান তাদের সকলকে ভোগ প্রসাদ খাওয়ানো হয়। অতীতে পাঠাবলি দেওয়া হলেও এখন সে সব পাট চুকে গেছে। চিনি ও নাড়ু নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অতীতে ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু গ্রামের মানুষের পুজোর দিনগুলিতে ঠিকানা ছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে খাওয়ানো হত, সেই পরম্পরা অবশ্য এখনও আছে। তবে আয়োজনের ব্যাপকতা কমেছে।


লেখকের কথা: জয়দীপ চক্রবর্তী

পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশ সহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা তে দীর্ঘদিন লিখে আসছি।প্রথম কবিতা লেখা শুরু ষষ্ঠ শ্রেণীতে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক পাখা ও বাড়ির বিড়াল নিয়ে।।এখনও পর্যন্ত দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।লেখালেখি আমার কাছে কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে নয় শুধুমাত্র এক অকৃত্রিম ভালোলাগা,অনেকটা নেশার মতো,মনের সুস্থতার উপাদান সংগ্রহ,নিজেকে ভালো রাখা আসলে এক কথায় বলতে গেলে না লিখে থাকতে পারি না।অনেক সংস্থা,কত চেনা অচেনা মানুষের ভালোবাসা,মর্যাদা ,সন্মান, সম্মাননা পেয়েছি এই পর্যন্ত ,কখনও কখনও মনে প্রশ্ন ভীড় করে এই সামান্য আমার লেখালেখি,এত ভালবাসা,সন্মান সত্যিই কি আমি পাওয়ার যোগ্য???যাইহোক আপনাদের আপনার আমার শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই আমার লেখাকে এখানে নির্বাচিত করার জন্য।আপনার ও আপনাদের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনেক শুভ কামনা, অভিনন্দন ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন ও সাবধানে থাকবেন।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।