কেসলার সিনড্রোম

লেখক: হৃদয় হক

যদিও আমরা তাদের নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাইনা। তবে, দৈনন্দিন জীবনে আমরা এসব স্যাটেলাইটের উপর নানান ভাবে নির্ভরশীল। স্যাটেলাইট আজীবন স্থায়ী নয়। একসময় এরা কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে জাঙ্ক বা আবর্জনায় পরিণত হয়। তবে তখন এরা গায়েব হয়ে যায়না কিংবা পৃথিবীতেও ফেরত আসেনা। এরা তাদের কক্ষপথেই রয়ে যায়। এই রয়ে যাওয়াটা মূলত প্রধান সমস্যা নয়। প্রধান সমস্যাটি হল এদের মারাত্মক গতি। অকেজো হবার পরেও এরা প্রচন্ড বেগে পৃথিবীর চার দিকে পাক খেতে থাকে। যদি এরূপ অনেক স্যাটেলাইট জমা হয়ে যায় তাহলে, এমন এক সময় আসবে যে, নতুন স্যাটেলাইট পাঠানোর সময় নষ্ট স্যাটেলাইটগুলোর সাথে থাক্কা খাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এতে এদের প্রচন্ড গতিশক্তির ফলে ধাক্কা খেয়ে এরা ভেঙ্গে যাবে। এরপর চারিদিকে অকেজো ও টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে, এ ভাঙ্গা টুকরোগুলো আবার অন্যান্য সক্রিয় স্যাটেলাইটগুলোকে ধাক্কা দেবে আবার তারা দেবে অন্যদের…. এভাবে চলতেই থাকবে। নাসার বিজ্ঞানী Donald J. Kessler ১৯৭৮ সালে প্রথম এই ধাক্কাধাক্কির ব্যাপারটা আঁচ করেন এবং তাঁর নামেই এই ঘটনার নাম দেওয়া হয় “কেসলার সিনড্রোম” (Kessler Syndrome)।

এরা আমারদের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের জন্যও মারাত্মক হুমকি-স্বরূপ। শুধু তাই নয়, এরা মিসাইলের মতো ভয়ংকরও বটে। কক্ষপথে সাধারণত এরা ৭-৮কি.মি./সে. বেগে থাকে এবং এই বেগে ১০সে.মি. এর একটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ৭ কিলোগ্রাম টি.এন.টি. -এর বল বা ক্ষমতা থাকে। একবার কল্পনা করুন, এমন হাজারটা স্যাটেলাইট অনেক গতি নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে আর একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

কেসলার
A computer simulation made by the Institute for Air and Space systems at the Technical University of Braunschweig, Germany, shows the distribution and movement of space debris at present and in future.
Image Credit: AP / TU Braunschweig


২০০৯ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ার স্যাটেলাইট একে অপরের সাথে সংঘর্ষ ঘটায় এবং এতে অনেক পরিমাণে ধ্বংসাবশেষ দেখা দেয় যা এই সিনড্রোমের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে বলা যায়।

এখন কথা হোলো, এই সিনড্রোম নিয়ে আপনি কেন মাথা ঘামাবেন? আধুনিক বিশ্বে স্যাটেলাইটের ভূমিকা অনেক। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি টেলিভিশন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জি.পি.এস, পরিবেশ দূষণের অবস্থা, সমুদ্রের পানির উচ্চতা এসব না জেনে বা ব্যবহার করে টিকে থাকতে পারবেন, তাহলে আপনার জন্য রইল অনেক শুভ কামনা। অবশ্য এসব ছাড়াও রয়েছে নানা উপগ্রহ, যেগুলো আঘাত পেলে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

তবে আশার কথা এখনও পর্যন্ত চিন্তার তেমন কোনো বিষয় নেই। কারণ, এটি এখনো শুরু হয় নি। বিজ্ঞানী কেসলারের মতে, এটি শুরু হতে আরও ৪০-৫০ বছর সময় লাগবে। তার উপর, কিছু ধ্বংসাবশেষ আমাদের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে যায় কিন্তু বাকিদের এই কক্ষপথ সাধারণ ভাবে ছেড়ে যেতে শতাব্দী লেগে যাবে। আবার আজকাল এরূপ অকেজো স্যাটেলাইটগুলোর অনেক নকশা আছে, তারার নকশার মত। এই ম্যাপ দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন কোন জাগায় স্যাটেলাইট পাঠাবেন। তবে সমস্যা হল, স্যাটেলাইট প্রেরণের হার যে ভাবে বাড়ছে, এতে করে সবগুলো স্যাটেলাইটের গতিপথ হিসাব রেখে স্যাটেলাইট পাঠানো ও তার নিয়ন্ত্রণ ভবিষ্যতে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

তাই গবেষণা চলছে, যার একটি উপায় এমন হতে পারে যে, পৃথিবী থেকে লেজার রশ্মি দিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহের ভাঙ্গা টুকরোগুলোকে কক্ষচ্যুত করে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ফিরিয়ে আনা যাতে বায়ুমন্ডলের সাথে সংঘর্ষে সেই টুকরো জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়া আজকাল কৃত্রিম উপগ্রহ বানানোর সময় এ বিষয়টি মাথায় রেখে এমন ভাবে বানানো হয়, যেন আয়ু ফুরোলে হয় তারা নিজের কক্ষপথ পালটে অন্য একটা কক্ষপথে ঠাঁই নেয়, যে কক্ষপথের নাম হল Graveyard Orbit, অথবা মৃত উপগ্রহরা যেন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ফিরে আসে এবং ঘর্ষণের ফলে আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে নতুন কৃত্রিম উপগ্রহকে জায়গা করে দেয়।


তথ্যসূত্র:
https://bigthink.com/paul-ratner/how-the-kessler-syndrome-can-end-all-space-e xploration-and-destroy-modern-life


লেখকের কথা: হৃদয় হক
নাম: মো. সাজেদুল হক। ছদ্মনাম: “হৃদয় হক”। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। প্রধানত জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখালিখি পছন্দের। লিখি, বাংলায় জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।