রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভিটামিন সি

লেখক: মিজানুর রহমান সেখ

ভিটামিন হল খাদ্য বস্তুতে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এক জৈব রাসায়নিক পদার্থ। একে খাদ্যপ্রাণ বলা হয়। কারণ আমাদের স্বাভাবিক পুষ্টি, বৃদ্ধি ও সঠিক শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য ভিটামিন অপরিহার্য। ১৯১১ সালে বিজ্ঞানী ফাঙ্ক প্রথম ভিটামিন নামকরণ করেন। ল্যাটিন শব্দ ‘vita’ মানে জীবন এবং amine মানে অ্যামোনিয়া। যদিও পরবর্তীকালে জানা যায় সব ভিটামিন অ্যামোনিয়া গোষ্ঠীভুক্ত নয়। বিজ্ঞানী হপকিন্সের মতে ভিটামিন ‘অত্যাবশ্যকীয় সহায়ক খাদ্যোপাদান’। এই করোনা-কালে আমরা প্রায়শই শুনছি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়ার কথা। আজ বরং জেনে নিই ভিটামিন সি এর খুঁটিনাটি।

ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।
উৎস:
আমলকি ও পেয়ারা ভিটামিন সি এর উৎকৃষ্ট উৎস। সবুজ শাকপাতা,পাকা পেঁপে,আনারস, টম্যাটো, কমলালেবু ও বিভিন্ন লেবুতে যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন সি থাকে। কলা,আপেল ও আঙুরে সামান্য থাকে। ছোলা ও মুগে অঙ্কুর গজালে ভিটামিন সি উৎপন্ন হয়।

দৈনিক প্রয়োজন:
স্বাভাবিক নারী পুরুষদের দৈনিক ৪০ মিলিগ্রাম (মিগ্রা) ভিটামিন সি হলেই চলবে। গর্ভবতী মহিলাদের ৬০ মিগ্রা এবং প্রসূতি মহিলাদের দৈনিক ৮০ মিগ্রা প্রয়োজন। শিশুদের অবশ্য ২৫ মিগ্রা ভিটামিন সি পেলেই স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ হবে।

ভিটামিন সি এর কাজ:
ভিটামিন সি কোলাজেন নামের প্রোটিন ও অস্টিয়োড গঠনে সহায়তা করে। এই কোলাজেন সারা দেহে ছড়িয়ে আছে। এই প্রোটিন সমস্ত সংযোগ রক্ষাকারী কোষের গঠনে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন সি হাড়, দাঁত, দাঁতের ডেন্টিন, রক্তবাহিনালি, তরুণাস্থি ইত্যাদিকে সুরক্ষা দেয় ও মজবুত রাখে। কার্বোহাইড্রেট বিপাকে, লোহা ও ক্যালসিয়াম শোষণে, হিমোগ্লোবিন ও লোহিতকনিকা গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া ক্ষত নিরাময়ে ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কাজে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহন করে। শরীরে অক্সিজেনবিরোধী উপাদানগুলিকে প্রতিহত করে। তাই একে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলে। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। অনেক বিশেষজ্ঞ জানান শরীরে বেশি ভিটামিন সি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ঠান্ডা লাগা থেকে দেহকে বাঁচায়। এমনকি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারইড কমাতে সহায়তা করে। এক কথায় ভিটামিন সি খুবই উপকারী একটা ভিটামিন।

ভিটামিন সি এর অভাব:
ভিটামিন সি এর অভাবে দাঁত ও মাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, রক্ত পড়ে ও দাঁত আলগা হয়ে যায়। শরীর দুর্বল, ত্বক বিবর্ণ, হাড়ে ও সন্ধিস্থলে ব্যাথা হয়। গাঁট ফুলে যায়। ক্ষত সারতে সময় লাগে। শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ভিটামিন সি এর খুব বেশি অভাব হলে স্কার্ভি রোগ হয়। ভিটামিন সি জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় তাই রান্নার সময় জল ফেলে দিলে ভিটামিনের অপচয় হয়। রোদের গরমে বা রান্নার তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। ফল কেটে রেখে দিলে ফলের রসের ভিটামিন সি বাতাসের অক্সিজেনে সংস্পর্শে জারন ঘটিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি খাদ্যে সোডা মেশালেও এই ভিটামিন সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা ও টাটকা খাদ্য থেকেই আমরা ভিটামিন সি পেতে পারি। তবে খুব বেশি ভিটামিন সি খাওয়া ভালো নয়। বেশি ভিটামিন সি খেলে বমিভাব ও পেটের গোলমাল দেখা যায়। এমনকি গবেষণায় জানা গেছে বেশি ভিটামিন সি কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে ও রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম মতো ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য খেতে হবে।


লেখকের কথা: মিজানুর রহমান সেখ
মিজানুর পেশায় শিক্ষক এবং একজন সমাজসেবক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই মূলত লেখালিখি। লেখক পদার্থবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।