আমার স্বাধীনতা

কবি: বুদ্ধদেব দাস

সত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে হয়েছি আমরা স্বাধীন,
বিবেক ও মানবিকতার দিক থেকে এখনতো আমারা পরাধীন।
নিজের ছেলেকে পড়াও তোমারা প্রাইভেট স্কুলে;
বছর দশেকের বাবা হারা ছেলেটা কাজ করে, তোমদের কারখানায়, হোটেলে।
স্কুল থেকে ফিরে এসে ছেলে মাকে না পেলে কান্নাকাটি করে;
মায়ের কথা মনে করে, কাজের ছেলেটার বিছানায় রোজ দুচোখে জল ভরে।
বেতনটা তার নাম মাত্র, কথাও শোনাও দুবেলা দুমুঠো খাবারে,
গভীর রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে,মা ও দিদি বোধহয় আজও রয়েছে অনাহারে।
তোমার ছেলের শরীর খারাপ হলে ছুটে যাও বেসরকারি হাসপাতালে;
সারারাত জ্বরে গা পুরে যাওয়া ছেলেটা বাসনগুলো মাজে যে সকালে।
পনেরোই আগস্ট উড়ছে তেরঙা, হচ্ছে প্রভাতফেরী, দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে ছেলেটা
অনেক দেখছিস স্বাধীনতা, কাজগুলো করবি কখন, ঘড়ি দেখ বাজে কটা।
সেদিন আমি স্বাধীন হবো, যেদিন আমাদের ছোট ছোট শ্রমিক শিশুরাও স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারবে;
সত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে, স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা এদের কাছে কাঁদছে যে নীরবে।

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক এক মেয়ে, ভরসা পায়না হাঁটতে রাস্তাতে
ধর্ষকও জামিন পায়, লজ্জায় পারে না শুধু ধর্ষিতা সমাজে মুখ দেখাতে।
চার বছরের দুধের শিশুকে করছে ধর্ষন, নরপিশাচ ধর্ষক
স্বাধীন দেশের আইনে সেই ধর্ষকও ছাড়া পায়, যদি হয় সে নাবালক।
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মেয়ে বধূ হয়ে যায় স্বামীর ঘরে,
পনের দায়ে কখনো কখনো আজ ডেড বডি আসে বাবার ঘরে।
সেদিন আমি স্বাধীন হবো, যেদিন আমাদের দিদি ও বোনেরা স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারবে;
সত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে, স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা এদের কাছে কাঁদছে যে নীরবে।

মা-বাবার এক ছেলে হয়েছে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত,
বাবা মারা গেছে, মায়ের কথা না শুনে নিজের পছন্দে ছেলে হল বিবাহিত।
মা সেকেলে, বৌমা একেলে দুজনের মতের বড্ড অমিল,
মায়ের জন্য ছেলে তাই, এক বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে করল নতুন ডিল।
আজ পনেরোই আগস্ট, বৃদ্ধাশ্রমের ছাদে উড়ছে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা;
স্বাধীন ভারতে, ছেলের পরাধীনে থেকে, মায়ের যে আজ নিজেকে লাগছে বড্ড একা।
সেদিন আমি স্বাধীন হবো, যেদিন আমাদের মা ও বাবারা বৃদ্ধাশ্রমে না থেকে স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারবে;
সত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে, স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা এদের কাছে কাঁদছে যে নীরবে।

দুশো বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে হয়তো আমরা হয়েছি স্বাধীন,
আমাদের বীর সেনাদের জন্য, এখনো কিন্তু আমারা হইনি নিরাপত্তাহীন ।
বুক ফেটে যায়, যখন দেখি বীরসেনা চিরঘুমে তেরঙা জড়িয়ে
জানিনা না কবে দেখতে পাব, ভারত মায়ের পদতলে নেই বীরশহীদের রক্ত রাঙিয়ে।
সেদিন আমি স্বাধীন হবো, যেদিন আমাদের কোনো বীর সেনাই শেষ বার বাড়ি যাবে না শহীদ হয়ে চিরঘুমে তেরঙা জড়িয়ে
সত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে, স্বাধীন ভারতের ভারতমাতা কি শান্তিতে থাকতে পারে শহীদের পরিবারকে কাঁদিয়ে।


ছবি: কুন্তল


লেখকের কথা: বুদ্ধদেব দাস
নেশা:মানুষজনের সাথে মেশা। বাসস্থান :পূর্ব মেদিনীপুর 
কোনো লেখক কিংবা কবি হওয়া এ অধমের সে যোগ্যতা নেই। কর্মজীবনে বিভিন্ন জায়গা বদলের সুবাদে উত্তর পূর্ব ভারত তথা বিভিন্ন মানুষজনের আত্মার সাথে যে আত্মীয়তা অল্পদিনে গড়ে ওঠে তাকে স্মৃতি হিসেবে আঁকড়ে রাখতে, তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাকে নিজের জীবনের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে, মাঝে মাঝে ফোনের টাচ্ প্যাডে দু -এক লাইন টাইপ করে ফেলি।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।