বিপ্লব এভাবে আসে না…

লেখক: ইচ্ছেমৃত্যু

বিপ্লব এভাবে আসে না…
যে একদিন তোমার দরজার কড়া নেড়ে বলবে
“আমি বিপ্লব এলোম গো হে
পথে এহ্‌ট্টু দেরি হয়ে গেলোন বটেহ্‌
তা এহেই যহন পড়েছি
মা জননী, দুটো চা জল খাবার দাও” –
বিপ্লব এমন ভাবে আসে না।

সামনে তাকাও, জঞ্জাল কুড়ানি বালককে দ্যাখো
তোমার আমার বই বা ফেলে দেওয়া কাগজ
যা পাচ্ছে – পড়ছে, গুছিয়ে রাখছে আলাদা বইয়ের ব্যাগে
রাতে টিমটিমে আলোয় ভাল করে পড়বে বলে…

বাঁদিকে তাকাও, কলম শানাচ্ছে পাতায় পাতায়
যুক্তির জালে ভেঙ্গে ফেলতে দেওয়ালের পর দেওয়াল;
বিদ্ধ করছে আজন্ম লালিত সংস্কার, লোকাচার;
জীর্ণ হতে থাকা বিবেক এখনও বিকোয়নি ওই লেখক।

ডানদিকে তাকাও, এক বৃদ্ধ অনলস পড়িয়ে যাচ্ছেন
ছেলে-মেয়েদের হাতে ধরে শেখাচ্ছেন বিজ্ঞান
শেখাচ্ছেন প্রশ্ন করতে, বিদ্ধ করতে, দেখাচ্ছেন পথ
প্রকৃত জ্ঞানের আলো দিচ্ছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে।

পিছনে তাকাও, বোরখা পরা মায়ের সাথে জিন্সে হাঁটছে তরুণী
সে তরুণী তোয়াক্কা করেনি কোনও ফতোয়া,
লড়ে যাচ্ছে পুরুষশাসিত সমাজের অনাচার অন্যায়ের সাথে
আর মেয়ের হাত ধরে মা-ও জানছে স্বাধীনতার মানে।

উপরে তাকাও, দশতলা বিল্ডিংয়ের কাচ দিয়ে দ্যাখো
ওই যুবক কম্পিউটার স্ক্রীনে তাকিয়ে অপলক
কোডের ভিতর দিয়ে ভাসছে তার চোখে –
পুরুলিয়ার ঊষরতা থেকে ছত্তিশগড়ের জঙ্গল।

না, এরা কেউ বিপ্লবী নয়।
বিপ্লব এভাবেও আসে না।

তবে…; একদিন,
ওই বালক, ওই লেখক, ওই শিক্ষক, ওই তরুণী, ওই যুবক
এসে দাঁড়াবে শমী বৃক্ষের নীচে –
শবের মত ঝুলতে থাকা পুঁটুলি খুলবে গাছ থেকে
তুলে নেবে যে যার মতো জমিয়ে রাখা অস্ত্র –
তাগিদ, কলম, শিক্ষা, সাহস, সোশ্যাল মিডিয়া।

বিপ্লব এভাবেই আসে —
শুধু অস্ত্র তুলে নিতে হয় নিজের মতো।


লেখকের কথা: ইচ্ছেমৃত্যু
জন্ম বর্ধমানের বর্ধিষ্ণু গ্রামে। পেশায় নরম তারের কারিগর আর নেশায় – রীতিমত নেশাড়ু, কী যে নেই তাতে – টুকটাক পড়াশোনা, ইচ্ছে হলে লেখা – সে কবিতা, গল্প, রম্যরচনা, নিবন্ধ যা কিছু হতে পারে, ছবি তোলা, বাগান করা এবং ইত্যাদি। তবে সব পরিচয় এসে শেষ হয় সৃষ্টিতে – পাঠক যেভাবে চিনবেন চিনে নেবেন।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

5 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।