তৃতীয় নয়ন

লেখক: অনুপম দাশশর্মা

          তখন সবে একটা পাত শেষ হয়েছে। নিমন্ত্রিতের ভীড় বেশ জমেছে। অজস্র কচকচানি, হাসি উচ্ছাসের মধ্যেই হঠাৎ বিকট বিলাপ চিৎকার। থতমত চোখগুলো সহসা স্থিমিত। হুড়মুড় করে বেশ কয়েকজন দৌড়ে ঢুকলো ঠাম্মার ঘরে। ঠাম্মা দেয়ালে পিঠ রেখে বসে থরথর করে কাঁপছে। হাতের মুঠোয় ভেলভেট কাপড়ের টুকরো। একেবারে ক্লাস ওয়ানের বন্ধু সহপাঠি গোপালের নিমন্ত্রণ ফেরানোর প্রশ্নই ছিল না দেবলের ।  গোপালের ছেলের অন্নপ্রাশন। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র আর অশীতিপর বৃদ্ধা ঠাকুমা বিলাসীবালা। এই নিপাট সংসারে আরো দুজন অতিথি পরমানন্দে পরিবারে আছেন, চল্লিশোর্ধ শ্রীকান্ত ঘোষ এবং তাঁর মা হারা সন্তান কার্তিক। গোপাল বলেছিল, শ্রীকান্তকাকু অসাধারণ কবিতা লেখেন, কিন্তু প্রচার বিমুখ, খানিকটা আর্থিক অভাব অন্যতম কারণ। একটা কাপড়ের দোকানে হিসেব রাখা কাজ ওর। এছাড়া দুটো প্রাইভেট টিউশন, ব্যাস। অথচ ওঁর ছেলে কার্তিক চরম বকাটে, শাসনবিহীন অদম্য কৈশোর চুরি, পকেটমারিতে দিব্যি নাম কুড়িয়েছে। শ্রীঘরে বার-দুয়েক কাটিয়ে এসেছে। আর বন্ধুপুত্র শ্রীকান্ত বাবার কোনও এক কৃতজ্ঞতাজনিত পুণ্যলাভে ঠাঁই পেয়েছে সংসারে। ঠাম্মাকে ধরে ধরে বিছানায় বসাল গোপাল।

— কী হয়েছে বলো তো? ঠাম্মা ধরা ধরা গলায় জানাল, আমার সোনার চেনটা নেই জরদা কৌটোয় ’রে।
— সেকি ? গোপাল আঁতকে উঠল।

ইতিমধ্যে ভীড় বেড়েছে ঘরে। গোপালের বাবা অসিত সেন বললেন, থানায় ফোন কর। স্থানীয় থানা থেকে এলেন এ.সি. কল্যাণ সামন্ত। আদ্যোপান্ত শুনে তাকালেন অসিত সেনের মুখে, মিঃ সেন বাড়িতে এত অতিথি, বড্ড কঠিন হয়ে গেল দেখছি। অনেকের সাথে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল সন্ধে থেকে কার্তিক বেপাত্তা। অথচ একটিও কাজের ভার তাঁকে দেওয়া হয়নি। কার্তিককে ধরা হল মিনিট পাঁচ বাদেই, বাড়ির পাশে একটি পুকুরের ধারে বসে বিড়ি ফুঁকছিল। মিঃ সামন্ত কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিতেই কার্তিক চেঁচাল আমি কিছু করিনি কোথাও, মাইরি বলছি। ঠাস করে একটাথাপ্পড় সাথে সাথে বাঁ গালে। আবার থানার লক-আপ। জীপে উঠতে উঠতে সামন্ত বললেন, দেখছি প্যাঁদানিতে মুখ খোলে কি না। ওখানেই দাঁড়ান। দেবল একঝলক দেখল শ্রীকান্ত তখন ভীড়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে, হয়তো একটু আগেই ডায়েরিতে লিখছিল, ডান হাতের মধ্যমায় কালির ছোপ। “চলুন, এবার ফেরা যাক।” দেবল ঘুরল। বাড়িতে আনন্দ উৎসব হঠাৎ ঠান্ডা। “চিন্তা করিস না, হার বেশিদুর যায়নি। ফেরত আসবেই, চলি”। গোপালের কাঁধে আলতো হাত রেখে দেবল বাইরে বেরিয়ে এল।

বাড়ি ফিরে স্বস্তি মোটেই আসছিল না দেবলের । আবার বেরল। আর্মহাস্ট স্ট্রিট কলেজ স্ট্রিট বেশি দূর নয়। দেবল ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল। মেডিকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে যেতে যেতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল দেবলের। কী আশ্চর্য! শ্রীকান্ত এখানে কেন? একটা বিড়ি-সিগারেট দোকানের সামনে ঝোলানো দড়ি থেকে আগুনে সিগারেটে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শ্রীকান্ত দ্রুত চলন্ত বাসে উঠে পড়ল। দেবল মোবাইলে ধরল গোপালকে। “শ্রীকান্তকাকু এখন কী করছে জানা তো”।
— “কেন বলত ? সে বাড়িতে নেই। একটা ডায়েরি নিয়ে বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ”।
দেবল এবার এগিয়ে গেল সেই সিগারেট দোকানে।
— আজ্ঞে, বলুন।
— একটু আগে যে লোকটি সিগারেট ধরাল এখানে নাম জানেন ? নাম বলতেই দেবলের ভ্রু কুঁচকে গেল, পাশাপাশি জেনে নিল কোন সময়ে উনি আসেন।

পরেরদিন প্রায় একই সময়ে দেবল হাজির ওই দোকানের একটু দূরে। ঠিক একইভাবে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে দেখেই দেবল পিছু নিল। দেবল দেখল শ্রীকান্ত বেশ টানটান হয়ে একটু জোরেই হেঁটে দুটো দোকান ছাড়িয়ে পাশের সরু গলিতে ঢুকে পড়ল। দেবল পিছন পিছন ঢুকে দেখল দোতলা ভাঙাচোরা একটি বাড়ি। নীচে পাশাপাশি তিনটি ঘর, চার কোণার উঠোন বড়ই পিচ্ছিল। শ্রীকান্ত কোথায় গেল ভেবে ঠিক করার আগেই ভুস করে একটি লোক পাশে দাঁড়িয়ে।
— ব্রজেন বাবু আজ আর বেরোবেন না, আপনি কাল আসুন। দেবল যেন অবাক হল, অ, তা ব্রজেনবাবুর যেটা দেবার কথা ছিল আমায়?
— আচ্ছা, প্যাকেট রেডি আছে কাল নেবেন।
— একবার আনো না প্যাকেট, আজকের মালটা দেখি একবার। দেবলের সুর নরম। লোকটি পিছু ফিরে চট করে পিছনের খোলা ঘরে ঢুকে একটা ভাঁজ করা না আটকান প্যাকেট নিয়ে এসে দেবলের সামনে ভাঁজ খুলতেই দেবলের তীক্ষ্ন চোখে পড়ে গেল চট্টগ্রাম লেখা ঠিকানার মধ্যে। ভেতরে দুটো ডায়েরি, পাতা ওল্টাতে বুঝল শ্রীকান্তের কবিতা। তাহলে শ্রীকান্ত এখানে ব্রজেন বাবু!
— আচ্ছা, ঠিক আছে । দেবল প্যাকেট ফিরিয়ে দিয়ে দুটো দশ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, আমি আজ এসেছি জানিও না কেমন। পরদিন দেবল গোপালদের বাড়ি গেল।
— শোন, কাকুর সাথে একটু গল্প করব। অসিত সেন সোফায় বসলেন, পাশের চেয়ারে দেবল আর গোপাল।
— শ্রীকান্তকাকুর সম্পর্কে মানে আপনাদের পরিবারে ওঁর। হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে একটু চুপ থেকে শুরু করলেন অসিত সেন।

শিবাশিস ছিল আমার ছেলেবেলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। অনেক ভাল গুণের মধ্যে বদ গুণ ছিল অতিরিক্ত মহিলাসঙ্গ লোভ। একদিন খবর এল সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে একটি যুবতীকে নিয়ে, খবর এলো ক’দিন পর সেই যুবতীকে বিয়ে করে রয়েছে বেহালায় ভাড়া বাড়িতে। বছর দেড়েক আর কোনও খবর নেই, ওকে প্রায় ভুলতেই বসেছি হঠাৎ একদিন এক বর্ষার রাতে তোমার কাকিমা আমাকে ঠেলে তুললো ঘুম থেকে। বাইরের দরজায় কেউ জোরে জোরে কড়া নাড়ছে। কে? জিজ্ঞাসা করতে ভারি গলা এলো, আমি শিবু দরজা খোল তাড়াতাড়ি। অবাক হলাম, শিবাশিস এত রাতে!
— কী দরকার এত রাতে? ভেসে এলো, আগে দরজা খোল দাঁড়াতে পারছি না জলের ঝাপটায়। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে সে ঘরে ঢুকল। মাথা বেয়ে ঝরঝর করে জল গড়াচ্ছে, তাঁর দুহাতে আঁকড়ে ধরা পলিথিন মোড়া একটি শিশু তিন কি চার মাসের। আমরা হতভম্ব কী বলব ভেবে পাচ্ছি না দেখে শিশুটিকে সে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর শিবুর জলদগম্ভীর গলা ফেটে পড়ল কান্নায়। দু’হাত জড়ো করে বলল, আমার একমাত্র সন্তান, তোদেরকেই দিয়ে গেলাম, ওকে বাঁচা তোরা ওর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার মাথা ঠিক নেই। আমরা কিছু বলবার আগেই প্রায় দৌড়ে ঘর ছেড়ে বৃষ্টিতে মিশে গেল শিবু। শ্রীকান্ত নাম তোমার কাকীমার দেওয়া। দেবল আবার জিজ্ঞাসু, কোনোদিন বাবা ছেলের সাক্ষাৎ হয়নি?
— হয়েছে, বহু বছর পর। একদিন শীতের সন্ধ্যায়, শ্রীকান্ত তখন যুবক। একমুখ দাড়ির ভেতর শিবুকে চিনতে আমার ভুল হয়নি। শ্রীকান্ত জানত তাঁর অতীত তাই সহজেই গল্পে মেতে গেল শিবুর সাথে। আমি একটু বাইরে বেরিয়ে যখন ফিরলাম দোকান থেকে সে চলে গেছে আর আসেনি কোনোদিনই। শ্রীকান্তের স্ত্রী কার্তিকের জন্মের সাথে সাথেই গত হয়েছিলেন।
— বেশ। শ্রীকান্তকাকুর ঘরটা একবার দেখতে চাই।
— শ্রীকান্ত ঘরে তালা দিয়ে টিউশন করতে গেছে, যদিও আরেকটি চাবি থাকেই আমার কাছে ।

দেবল ঘরে ঢুকে তাকে সাজান এক একটা ডায়েরি খুলে কিছু পাতায় চোখ বোলাল। বেশ কিছু ম্যাগাজিন, দেশ পত্রিকা ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা পাতায় চোখ আটকে গেল। নিজের পকেট থেকে ছোট নোট প্যাডে লিখে নিল কিছু দ্রুত।

রের দিন। সকাল দশটা। দেবল হাজির কলকাতা কর্পোরেশনের মূল বিল্ডিংয়ে। আধঘন্টা পরে যখন বেরিয়ে এল দেবলের মুখে প্রাক শরতের নীল আকাশ ঝকমক করছে। বাড়ি ফিরে মিনিট দশেক কথা হল ফোনে পুলিশ অফিসার সামন্তের সাথে। আর একটি ফোন, গোপালকে। সন্ধের আকাশ এখন ভেজা তুলোর জল ঝড়াচ্ছে মাঝে মাঝে। ভাদরের অসময়ের খাবলা বৃষ্টি কিছুটা হলেও বাইরে মানুষজন কমিয়েছে। দেবল এখন গোপালের বাড়িতে। আজ শ্রীকান্তের টিউশন তাও তাঁকে বাড়িতেই থাকতে বলা হয়েছে। দুশ্চিন্তার মুখ নিয়ে শ্রীকান্ত গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে। তাঁর মুখোমুখি চেয়ারে বসে পরপর অসিত সেন, গোপাল, দেবল।

শ্রীকান্তের চোখে চোখ রেখেই দেবল বলল, কাকু কার্তিকের কাছ থেকে হার এখনও পাওয়া যায়নি। যাকগে, নতুন কী লিখলেন দেখান তো।
— হ্যাঁ দেখাচ্ছি। শ্রীকান্ত উঠে তাক থেকে একটি নতুন ডায়েরি নামাল। দেবল দেখল ডায়েরির পাশে রাখা নতুন ডট পেন।
— এই ধরনের কলম কবে থেকে ব্যবহার করছেন?
— না, মানে আগের কলমটার প্যাঁচ কেটে যাওয়াতে…
— অ, তা আগের কলমটা দেখান দেখি, প্যাঁচ কেমন কাটলো। শ্রীকান্ত একটু ভেবে ড্রয়ার থেকে ভাঙা কালির কলম বের করে দিল দেবলের হাতে।
— এটাই আপনার প্রিয় কলম, এভাবে প্যাঁচ কাটলো? শ্রীকান্ত মাথা নাড়ল, পুরোনো হয়ে গেছে।
— না। পুরোনো হয়নি। দেবলের চোয়াল কঠিন।
শ্রীকান্তের প্রশ্নভরা চোখকে সাক্ষী রেখে দেবল চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল, এগিয়ে গেল সামনের বই, ম্যাগাজিন সাজানো তাকে। বেশ কয়েকটি ম্যাগাজিনের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল আরেকটি ঠিক একই দেখতে কলম। প্যাঁচ কাটা। আর তখনি ঘরে ঢুকলেন অফিসার মিঃ সামন্ত।
— আসুন। ধরুন। দেবল হাতে ধরা কলম বাড়াল। আস্তে আস্তে প্যাঁচ খুলুন। খুলতেই কলমের পেট থেকে বেরিয়ে পড়ল ঠাম্মার একভরি হার! ঘরে এখন শুধুই নিঃশ্বাসের শব্দ। দেবল ফিরল শ্রীকান্তর দিকে।
— তাহলে ব্রজেন বাবু, শেষ রক্ষা হল না। মুহূর্তে শ্রীকান্তর মুখ পাংশুবর্ণ। অসিত সেন কিছু বুঝতে পারছেন না। কে ব্রজেন? ও আমাদের শ্রীকান্ত। দেবল ঘুরল সামন্তর দিকে। এবার নিয়ে আসুন। মিঃ সামন্ত বাইরে থেকে যাঁকে ঘরে আনলেন তাঁকে দেখে।


সবাই বিস্ময়ে হাঁ। ব্রজেন আর শ্রীকান্ত হুবহ এক দেখতে। বিস্ময়ে গোপালের মুখ থেকে বেরল, টুইন!!
— এগজ্যাক্টলি। নাউ আ্যরেস্ট হিম। তর্জনী ব্রজেনের দিকে। পরদিন। সময় সন্ধ্যা। শ্রীকান্তের ঘরে সবাই। কার্তিকও। ছাড়া পেয়েছে।
— সবকিছু খুলে বল দেবল, কোন গন্ধ থাকলে শ্রীকান্তকেও ছাড়ব না। অসিত সেন বললেন।
— খানিকটা আচমকাই শ্রীকান্তকাকুকে দেখতে পাই কলেজ স্ট্রিটে, পিছু ধাওয়া করে জানলাম সে ব্রজেন ওখানে। কারবার অনৈতিক। বিভিন্ন কবি লেখকের লেখা চুরি করে অন্যের চাহিদামত প্রতিবেশী দেশে বিপননের বন্দোবস্ত করে মোটা কমিশনের বদলে।
ধন্দ লাগল, শ্রীকান্ত নিজেই যেখানে ভালো লিখিয়ে, এমন ধান্দার কি দরকার ? হালকা তল্লাসি চালালাম এই ঘরে, ঘাঁটাঘাঁটিতে বেরিয়ে পড়ল একটি ম্যাগাজিনের পাতার ভেতর এক ফালি কাগজ। একটি জন্ম তারিখ সাল আর হাসপাতালের নাম লাল কালিতে লেখা।

গেলাম কলকাতা কর্পোরেশনের ডুপ্লিকেট বার্থ সার্টিফিকেট সেকশানে। ওখানে সার্চ ফি জমা দিলে আ্যপ্লিক্যান্টকেই সার্চ করতে দেওয়া হয়। অতএব মোটা রেজিস্টারের নির্দিষ্ট পাতায় সাল তারিখ সময় মেলাতেই জলের মতো তরল হয়ে গেল ব্রজেনের অস্তিত্ব।

যমজ পুত্র সন্তান প্রসব করেছিলেন শিবাশিসের স্ত্রী। আমার ফোন পেয়েই কলেজ স্ট্রিটের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছেন শ্রীকান্তকে সামন্তবাবু। পড়েছিল মুখবাঁধা অবস্থায়।
— শ্রীকান্তকাকু ব্রজেনকে কবে থেকে চিনতেন? গোপালের প্রশ্ন।
— মাস দুয়েকের সাক্ষাৎ তবে ব্রজেনের অস্তিত্বের খোঁজ পেয়েছেন বহু আগেই, বাবার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ-এর দিন। দুই মাস আগে কলেজ স্ট্রিটে দু’জন মুখোমুখি হতে নিজেদেরকে চিনে বুঝে নেয়। ব্রজেন বইপাড়ায় চেনা মুখ। শ্রীকান্ত ধরেছিল তাঁর লেখা প্রকাশের জন্য কিন্তু জানত না ব্রজেনের কুকর্ম। ব্রজেনের হাতে শ্রীকান্তের ডায়েরি আসতেই বদমাইশি মাথায় চেপে বসে। পার্শ্ব অনুচরদের সাহায্যে শ্রীকান্তকে আটকে রাখে ঐ বাড়িতে। আর নিজে শ্রীকান্ত সেজে চলে আসে এই বাড়িতে।
— তার মানে হার চুরি করেছিল ব্রজেন! অসিত সেন ধাতস্থ অনেকটাই।
— ঠিক তাই। কার্তিককে থানায় নিয়ে যাবার সময় শ্রীকান্তের ভাবলশহীন মুখটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আচ্ছা এবার উঠতে হবে, রাত হচ্ছে বেশ। দেবল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
— তাহলে শ্রীকান্তের একটাই অপরাধ ব্রজেনের ব্যাপারে না জানানো, তাই তো? অসিত সেনের চোখ দেবলের দিকে। সোজা টানটান দাঁড়ান দেবল ফিরল শ্রীকান্তর নীচু মুখের দিকে।
— আমরা জেনেছি চুরি যার মনে সে চুরি করতে অসমর্থ হলেও আদতে চোরই। হার চুরি করার পরিকল্পনা শ্রীকান্তর মস্তিষ্কপ্রসূত। চলি এবার। শুভ রাত। দেবল দরজা খুলে বেরিয়ে গেল সবার একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে।


লেখক পরিচিতি: অনিপম দাশশর্মা

কৈশোর থেকেই লেখালেখির দিকে ঝোঁকটাই আজকে সাহিত্য যাপনে স্থায়ী করে দিয়েছে। স্কুল কলেজের দেয়াল পত্রিকা থেকে প্রাত্যহিক সংবাদপত্রের সাহিত্য বিভাগ।মাঝেমধ্যে কবিতা, গল্প প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়া, এভাবে চলতে চলতে যোগাযোগের সাম্প্রতিক বড় মাধ্যম ইন্টারনেটে লেখার জন্য আরও বৃহৎ পরিসর পাওয়াতে, যথার্থ রূপে কবিতা যাপন শুরু আমার। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পালকের ঘরবাড়ি (২০১২), কুয়াশার কার্নিশ (২০১৫), উল্কাপ্রপাত (২০১৮), যদি আড়াল সরে (২০১৯), রাত্রির চর্যাপদ (২০২০)। ২০১২-তে প্রথম কবি হিসেবে সম্বর্ধনা পেলাম একটি নাট্যসংস্থার দ্বারা কলকাতার সুজাতা সদনে। ২০১৯-এ প্রকাশিত কবিতার বই 'যদি আড়াল সরে' নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মৃতি পুরস্কার ও অনিলা দেবী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯-এ ভূষিত হয়েছে। সুরজিৎ ও বন্ধুরা কবিতা ক্লাবে 'কলমকার সেরা' পুরস্কার ২০১৯ প্রাপ্ত হয়েছে।
শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

4 Comments

  1. Simanti chatterjee

    অসাধারণ লাগলো.…সাধারণত গোয়েন্দা গল্পে সাসপেন্স ধরে রাখাটা খুব একটা সোজা কাজ নয়…লেখক সেটা অনায়াসেই পেরেছেন।🙏🙏

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।