হাবুকথা : নেশা

লেখক : রাজীব চক্রবর্ত্তী

হাবুর শুকনো নেশার কথা আগেই বলেছি। গঞ্জিকার প্রতি হাবুর আসক্তি আছে। ও অবিশ্যি বলে বাবার প্রসাদ। ছিলিম টিলিম নয়। সিগারেট বা বিড়ির মধ্যে মিশিয়েই চলে সুখটান।

ভিজে নেশা হাবু একদম সহ্য করতে পারে না। বোতলপ্রেমীদের উপর ওর জাতক্রোধ। এই নিয়ে টুকটাক ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে। গতবছর দোলের দিন বেলা এগারোটা নাগাদ হাবু এল ঠেকে। চোখ দুটো রক্তবর্ণ। কালো, বেগুনী রঙে ঢাকা মুখে বিড়ি খাওয়া হলদে দাঁতগুলো চকচক করছে। সারা শরীর নানা রঙে রাঙা। বেশ একটা ফুরফুরে ভাব। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাবার প্রসাদ সেবন করে এসেছে। ওদিকে রকে বসা কেলো, ভুতো আর বিলে তখন জল পুলিশের আন্ডারে। একটা মঠ নিয়ে তিনজনের মধ্যে বদান্যতার লড়াই শুরু হয়েছে। কে কাকে খাওয়াবে তাই নিয়ে রীতিমতো হাতাহাতি চলছে।

হাবু চোখ কুঁচকে তাকাল। তারপর সবাইকে আবির মাখিয়ে শুরু করল সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ। মাতাল তিনটের চৌদ্দ গুষ্ঠি তুলে খিস্তির বন্যা বইয়ে দিল। বেশ মজার দৃশ্য। হাবুকে খুঁচিয়ে দেওয়ার জন্য হাওয়ায় কথা ভাসিয়ে দিলাম, বোঝ ঠ্যালা। একজন নেশাখোর অন্যদের নেশা করার জন্য গালাগালি দিচ্ছে!

এক মুহূর্ত দেরি না করে হাবু কথাগুলো লুফে নিল।

তোদের শালা কিছুতেই
বুঝিয়ে পারব না যে এটা নেশা নয়।
এটা তবে কি হাবুবাবু?
এ হল বাবার প্রসাদ সেবন
করে সাধনা।

একটু থেমে আবার শুরু করে, এতে মন স্থির হয়। মানুষ চিন্তার জগতে উন্নীত হয়। ও তোরা বুঝবি না। আমি এখন তোদের থেকে অনেকটা উপরে।

বুঝলাম ব্যাটা হাওয়ায় ভাসছে।

কাছে এসে একটু গম্ভীর হয়ে বলে, ঐ তিনটেকে দ্যাখ! তরল গরলের নেশায় বেসামাল। নেশা কেটে গেলে বোধোদয় হবে। তখন মাথার দুদিক হাত দিয়ে চেপে নিজেরাই বলবে, সব ফালতু। রঙীন স্বপ্ন দেখিয়ে চেতনা লুপ্ত করে।

তারপর বিড়িতে একটা সুখটান দিয়ে এক মুঠো রং আকাশে উড়িয়ে দিয়ে হেসে উঠল, রঙের নেশায় মেতেই আমাদের জীবনটা ধোঁয়া হয়ে গেল বুঝলি! একটু চুপ করে থেকে চিৎকার করে উঠল – রঙিন বোতলগুলো আঁকড়ে ধরার স্বাধীনতার সাথে ভেঙে ফেলার অধিকার থাকাও জরুরী।


লেখক পরিচিতি : রাজীব চক্রবর্ত্তী
জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর, কলকাতার সিঁথিতে। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। দৈনন্দিনতার ক্লান্তি কাটাতেই মূলত: কলম ধরা। বেশ কয়েকটি লিট্ল ম্যাগাজিনে লিখেছেন গল্প, কবিতা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত "সংশ্লেষ" নামক গদ্য সংকলনে স্থান পেয়েছে তাঁর মুক্তগদ্য। ঐ একই বছরে সোনারপুর কাব্যমঞ্চ আয়োজিত স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত "অন্য গদ্য" গ্রন্থে স্থান পেয়েছে তাঁর গদ্য। জীবনের বিবিধ অনুভূতি, বাস্তবতাকে ছন্দে বাঁধার প্রয়াসে তাঁর কবিতাচর্চা।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।