করোনা ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে খাদ্য

লেখক: মিজানুর রহমান সেখ

সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা আতঙ্কের মধ্যে নিজেকে ও পরিবারের সকলকে সুস্থ রাখার জন্য একদিকে যেমন হাত ধোওয়া ও পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার নিয়মগুলো যথাযথ অনুসরণ করতে হবে, তেমনই পুষ্টি সংক্রান্তবিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষত যে সমস্ত খাদ্য ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ হিসাবে কাজ করে সেগুলো নিয়মিত ভাবে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতে রাখা দরকার। এখানে আমরা জেনে নেব রোগ প্রতিরোধে খাদ্য -এর ভূমিকা কি।

লকডাউনের জন্য বাইরে না বেরোলেও গরমের কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বার বার প্রচুর পরিমাণ জল পান করতে হবে যাতে ঘাম ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থগুলো সহজেই বেরিয়ে যায়। টক জাতীয় ফল যেমন কমলা লেবু, পাতি লেবু, মুসাম্বি লেবু ইত্যাদি ভিটামিন-সি (Vitamin-C)-এর অফুরান জোগান দেয়। এগুলো ভালো করে ধুয়ে খেলে বা আমলকী জাতীয় সাইট্রাস ফল খোসা সমেত ও পেয়ারা নিয়মিত খেলে একদিকে প্রচুর ভিটামিন সি ও ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া প্রায় নিয়মিত প্রচুর শাকসবজি ও স্যালাড খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সবজি ও স্যালাডের ফলগুলোকে ‘ব্লানচিং'(blanching) অর্থাৎ হাল্কা গরম জলে নুন দিয়ে খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রেখে জলটা ফেলে ভাল করে ধুয়ে নিলে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা দূর হবে। এক্ষেত্রে বাজার থেকে এনে অল্প ধুয়ে কাঁচা ফল ও সব্জি খেলে কিন্তু অণুজীবদের কুপ্রভাব শরীর ও স্বাস্থ্যে পড়তে পারে।ফলের ত্বকের নিচে অধিকাংশ ভিটামিন থাকে তাই আপেল, নাসপাতি প্রভৃতি ফল খোসা না ছাড়িয়ে ‘ব্লানচিং’ করে খাওয়া উচিত। বিশেষত পরিণত বয়স্ক মানুষদের জন্য ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে তিসি (flaxseed) নিয়মিত খাওয়া ভালো।এই প্রকার দানা-শষ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা -৩(OMEGA-3) ও অ্যান্টি- অক্সিড্যান্ট(Antioxidant) থাকে। বাজারে এই জাতীয় সূর্যমুখীর দানা, কুমড়ো দানা সহজেই পাওয়া যায়। যাঁদের অবশ্য ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে তাঁরা সাবধানতা অবলম্বন করে দানা শস্য খাবেন। এছাড়া দেশীয় মশলা যেমন- আদা, রসুন, হলুদ, কালোজিরে প্রভৃতির যথাযথ ব্যবহার সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী।

কিছু ভ্রান্ত ধারনা আছে যে মশলা শরীর খারাপ করে এই ধারণা একেবারেই সত্যি না। বরং মাংস রান্নার সময় তেলের পরিমান ঠিক রেখে সবজি, মশলা সহযোগে স্টু (stew) জাতীয় রান্না শরীরের পক্ষে বেশ ভালো। এছাড়া সকালে বাদাম জাতীয় খাদ্য যেমন কাঠবাদাম (Almond) বা ছোলা ভিজিয়ে খেলে প্রচুর পরিমান অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার পাওয়া যায়। শিশুদের চিনির পরিবর্তে গুড় খাওয়ানোর অভ্যাস করলে ভালো কারণ গুড়ে প্রচুর আয়রন থাকে। রোজকার খাদ্যতালিকায় প্রায় প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ মেনু থাকা ভালো। এক্ষেত্রে বাঙালির মাছ-ভাতের গুরুত্বই বেশি কারন মাছের ওমেগা- ৩ ও ওমেগা- ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা একদিকে ইমিউনিটি বুস্ট করে আবার হার্টের পক্ষেও ভালো। মুরগির মাংস যথাযথ পরিষ্কার ও ভালো করে সেদ্ধ না করলে জীবাণু থাকার সম্ভবনা প্রবল, কারণ পোলট্রি ফার্মে যেভাবে মুরগি পালন হয় তা জীবাণু বহন করে।খাসির মাংস যেহেতু ‘রেড মিট’ পর্যায়ে পরে তাই খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়, বিশেষত যাদের কোলেস্টেরল ও হার্টের সমস্যা আছে।

বর্তমানের এই পরিস্তিতিতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন বাড়ির সকলের সাথে আনন্দে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহন করা। দুশ্চিন্তা দূর করে বাড়ির মধ্যে হাল্কা ব্যায়াম ও পরিমিত ডায়েট মেনে চলা। রোগ প্রতিরোধে খাদ্য -এর ভূমিকা যে অসীম সে স্পষ্টই হয়ে গেল।


লেখকের কথা: মিজানুর রহমান সেখ
মিজানুর পেশায় শিক্ষক এবং একজন সমাজসেবক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই মূলত লেখালিখি। লেখক পদার্থবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।