চুপ-শৈশব: পুরিয়া

লেখক: স্বাগতা আচার্য্য

নাকে বৃষ্টিফোঁটা ঝরা শুরু হলেই নাক টানতে টানতে ঠাকুমার পেছন পেছন চটির অনভ্যাস চটচট আওয়াজ তুলতে তুলতে হাজির হতাম দাড়িদাদুর কাছে (তখন পা দিয়ে ঠান্ডা ঢোকার ভয়ে চটিটা পরতেই হত)। দাড়িদাদু চশমায় চোখ সেট করে রোগীর দিকে কপাল কুঁচকে এক ঝলক তাকাতো, আমিও অবিশ্যি ভয়ডর না পেয়ে কপাল কুঁচকে বড়বড় চোখ (জন্মগত) করেই একঝলক নাক টেনে নিতাম। ভাবখানা এই – ওই বুড়িকে জিজ্ঞাসা করার কি আছে, আমিই তো বুঝিয়ে দিতে পারি? তাপ্পর চোখ কপালে তুলে যেন সোনা মাপছে এরকম ভাব দেখিয়ে কাগজের চৌকোতে ঢালতেন অমৃতগুঁড়ো ! তাতে যোগ হত গন্ধফোঁটা ! মাঝে মাঝে ঠাকুমা নাকের traffic জ্যাম হাত দিয়েই, কিংবা শাড়ির আঁচল দিয়েই clear করে দিত। শুধু আমার ঘাড়ে ছোট্ট করে একটা ঝাঁকুনি পড়ত, ব্যাস ! রুমাল only for দূরে কোথাও গেলে হাতে রাখার জন্য। শৌখিন জিনিস তো ! নাকের কাছেও আনার স্পর্ধা ছিল না। বাড়ি ফিরেই পুরিয়া জিভের মাঝে। আহা ! কি সোয়াদ ! দুই কিংবা তিনবারের বালাই নেই। মাঝে মাঝেই পুরিয়া খোলো আর খাও, ছোটদেরকেও খাওয়ার সুযোগ করে দাও। জ্যাম উধাও। 

এরপর যখন বুঝতে শিখেছি জ্বর টাইফোয়েড, কিংবা সর্দি নিউমোনিয়া হতে পারে, ততদিনে এসে গেছে কোনো ডাক্তারকাকু, গলায় stethoscope….আর সাইকেলের বেলের আওয়াজ। বাড়িতে অসুস্থতার খবর পেলেই বারবার দেখে যেত। যতক্ষণ না প্রকোপ কমছে, ঠায় মাথার কাছে বসে…চা জুড়িয়ে জল…খেয়ে যাবার অনুরোধে –  সে পরে দেখা যাবে। মাঝরাতেও সে সাইকেলের দুচাকা ঘুরছে ! কোনো নবজাতকের কান্না আনতে উদ্বেগি চোখের পাশে ফুটছে গরম জল ! Lifeboy (lifebuoy) সাবানে  ধুয়ে নিচ্ছে সারারাত ঠায় জেগে থাকা হাতদুটি, আর জগ উপুড় করে জল ঢালছে সদ্য দাদু হওয়া কোনো তৃপ্ত প্রবীণ! জ্বর কেটে যাওয়া কোনো বাবা হয়তো অপেক্ষায় আরেকবার দেখে যাবার  কথা বলতে, খুঁটে বাঁধা দশটি টাকা গুঁজে দেয় আবার কোনো সদস্যের পেটে মোচড় দেবার কথাটা স্মরণ করিয়ে দিতে!

Hospital এ গেলেই জ্বর কাশি পেটখারাপের  ওষুধ একসাথে আনতাম। dose এর বালাই নেই। জ্বর মানেই মুখস্থ করা paracetamol, পেটখারাপ মানেই metrogyl….তবে একটা কি দুটো, ভাল হয়ে গেলেই গুছিয়ে রেখে দিতাম পরে আবার কারোর জন্য। লাল লোশন ঝুলে থাকতো কোনো খড়ের চালার কোণে।

এখন আমি সেই কাঠগড়ায়। ওষুধ, রোগের স্নেহচ্ছায়ায়। রোজ মরে যাচ্ছি নিজের পুরিয়ায়। রোগী সহ অতি পরিজনদের আঙুল চোখের চৌকাঠে। আঙুল ঘুরিয়ে দেবার সাহস নেই।  পুরিয়ায় আছি যে! কেন নিজের বিপদ ডাকবো? তারচে’ দুকলম লিখে দিলেই রোববার দুপুরে মাংস ভাতের তৃপ্তি! মরুর উট, বালিতে মুখ ডুবিয়ে দিলেই কেউ আমায় দেখতে পাবে না! কিন্তু  ঝড় আমার দিকেও আসবে এ ভাবতে নারাজ!


লেখকের কথা: স্বাগতা আচার্য্য
নেশায় -আবোলতাবোল পাঠিকা। পেশায় -সেবিকা। নিবাস -পূর্ব মেদিনীপুর।
লেখকের ভাষায় – “যা ভাবি লেখা আসে তার সিকি; হইচই মার্কা মনন। এলোমেলো বুনন। গুণ খুব একটা নেই। কেউ লেখা চাইলে ধড়ফড় করে কেমন। ভুল ক্রুটি নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন। জানাবেন অকপটে। পরের বার শুধরে দেবার আশায় আছি।”

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।